চাকরি হারানোর ভয় কি আপনাকে রাত দিন তাড়া করে বেড়াচ্ছে?

সেই ছোট্টবেলা থেকেই আমাদের মনে গেঁথে দেয়া হয়, ভালো করে পড়াশোনা শিখে বড়ো হয়ে একটা ভালো চাকরি যোগার করতে হবে। জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে, তাহলেই তুমি সফল। নানা প্রতিযোগীতা ও প্রতিকূলতা অতিক্রম করে যখন কলেজ জীবনের শেষে হাতে ডিগ্রি আসে, তখনও স্বস্তি নেই। এবার যে করেই হোক একটা চাকরি পেতে হবে। শুরু হয় আরেক প্রস্থ লড়াই। সরকারী চাকরি প্রাথমিক লক্ষ্য থাকলেও আমরা ধীরে ধীরে বুঝতে পারি সরকারী চাকরি সীমিত সংখ্যক মানুষের কপালেই জোটে। সুতরাং বেসরকারী/কর্পোরেট সেক্টরেই আমরা প্রতিষ্ঠিত হতে চেষ্টা করি। আজকাল সেসব জায়গাতেও অনেক প্রতিযোগিতা। অনেক লড়াই সংগ্রাম করে যখন একটা চাকরি জোটে , তখন মনে একটু স্বস্তি আসে। মন তখন ভবিষ্যত স্বপ্নের জাল বুনে চলে। কোথা থেকে যেন এমন বিশ্বাস চলে আসে মনে, এতো কষ্ট করে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে পাওয়া চাকরি টা বোধোয় স্থায়ী হবে, দেবে ভবিষ্যত জীবনের নিরাপত্তা। কিছুদিন কাজ করার পর আমরা বুঝতে পারি, এই চাকরি মোটেও পার্মানেন্ট নয়। প্রতিযোগীতা এখানে অনেক বেশী। চাকরি পাওয়ার থেকে চাকরি টিকিয়ে রাখা টা অনেক বেশী চ্যালেঞ্জিং। পারফর্মেন্স, টার্গেট, ডেডলাইন, ক্লোজিং এর জাঁতা কলে জীবন নাজেহাল হয়ে ওঠে। পারফর্ম করতে না পারলে চাকরি খোয়ানোর ভয়। এই অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ভাবনা থেকেই জন্ম নেয় স্ট্রেস ও এঞ্জাইটি । আসক্তি বাড়ে নেশা দ্রব্যে। যারা এই অত্যধিক মানসিক চাপ সহ্য করতে পারে না, তাদের মধ্যে নেশাসক্তি, মূড সুইঙ, অপরাধ প্রবণতা, এমনকি ডিপ্রেশন এর লক্ষণও দেখা যেতে পারে। কারো কারো মধ্যে অকারণ হিংস্রতা এমনকী আত্মহত্যা প্রবণতাও দেখা যায়।


চাকরি হারানোর ভয় কাটিয়ে ওঠার উপায়


চাকরি হারানোর ভয় কাটিয়ে ওঠার উপায় কি? How to overcome the fear of losing job?


সাম্প্রতিক একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মীদের  অনলাইন মিটিং এর একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। এতে দেখা যাচ্ছে কিভাবে বস তার অধস্তণ কর্মীদের মানসিকভাবে হেনস্তা করছে, চাকরি কেড়ে নেয়ার হুমকি দিচ্ছে! এই ধরণের কর্ম সংস্কৃতি মোটেও কাম্য নয়। এটা কোনো বিক্ষিপ্ত ঘটনা নয়। যারা কর্পোরেট জগতে কাজ করেন সবারই কমবেশী এই রকমের অভিজ্ঞতা আছে। 

আমরা প্রত্যেকেই জানি, প্রতিযোগীতা র লড়াইয়ে টিকে থাকতে গেলে কাজের চাপ, টার্গেট এগুলি থাকবেই।তাই বলে যদি সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকতে হয় ' এই বুঝি চাকরিটা গেলো!' তাহলে নিশ্চই ভাবার সময় এসেছে, এর থেকে উত্তরণের পথ কি? সে বিষয়ে। এই ধরণের আশঙ্কা দূর করতে বা ভয়কে জয় করতে যে কাজ গুলি করা যেতে পারে তা নীচে আলোচনা করা হলো -


চাকরির নিরাপত্তার অভাবের কারণে সৃষ্ট উদ্বেগের সাথে মোকাবিলা করা অনেক সময় চ্যালেঞ্জিং হতে পারে, তবে এই ভয়ের বা দুশ্চিন্তার অনুভূতিগুলিকে সঠিক ভাবে মেনেজ  করতে সাহায্য করার জন্য আপনি  এমন কিছু কৌশল প্রয়োগ করতে পারেন যা প্রতিকূলতার মধ্যেও আপনাকে আত্মবিশ্বাসী থাকতে সাহায্য করবে।  এখানে এমন কিছু উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলো।


● নেতিবাচক চিন্তাগুলি কে চিহ্নিত করুন এবং চ্যালেঞ্জ করুন: 

উদ্বেগ প্রায়শই বিপর্যয়মূলক চিন্তাভাবনা এবং সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির প্রত্যাশা থেকে উদ্ভূত হয়। আপনি যখন নেতিবাচক চিন্তা করছেন তখন এগুলিকে বিশ্লেষণ করুন এবং তাদের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন করুন। এই চিন্তাগুলিকে সমর্থন করার প্রমাণ আছে কিনা বা বিকল্প, আরও ইতিবাচক ব্যাখ্যা আছে কিনা তা নিজেকে জিজ্ঞাসা করে তাদের পাল্টা চ্যালেঞ্জ করুন। পজিটিভ মাইন্ডসেট বজায় রাখতে প্রয়োজনে পজিটিভ সেল্ফ এফার্মেশন প্র্যাকটিস করুন।


● যা কিছু আপনার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে  তার উপরে ফোকাস করুন : 

চাকরির নিরাপত্তা প্রায়শই আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে বাহ্যিক কারণগুলির দ্বারা প্রভাবিত হয়। আপনি পরিবর্তন করতে পারবেন না এমন জিনিসগুলির উপর মনোযোগ স্থির করার পরিবর্তে, আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন এমন দিকগুলিতে মনোনিবেশ করুন। সেগুলি উন্নত করার চেষ্টা করুন।এতে আপনার পেশাগত দক্ষতা বাড়ানো, ব্যক্তিত্ব বিকাশ, নেটওয়ার্কিং বা বিকল্প অন্যান্য পেশার বিকল্পগুলি অন্বেষণ করা জড়িত থাকতে পারে। সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে, আপনি স্বস্তির অনুভূতি ফিরে পেতে এবং অতিরিক্ত উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণ করতে  পারেন। সর্বোপরি, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পজিটিভ থাকতে চাইলে আপনাকে ক্রমাগত প্রয়াস চালিয়ে যেতে হবে।


● নিজের জন্য একটি আর্থিক নিরাপত্তা বলয় তৈরি করুন : 

আর্থিক উদ্বেগ প্রায়ই চাকরির নিরাপত্তাহীনতার উদ্বেগকে আরও বহুগুণ বাড়িয়ে তোলে। একটি বাজেট তৈরি করা, অর্থ সঞ্চয় করা এবং অপ্রয়োজনীয় খরচ কমানো এই দুশ্চিন্তাগুলির কিছুটা উপশম করতে সাহায্য করতে পারে। একটি জরুরী তহবিল থাকা প্রয়োজণ যা অনিশ্চিত সময়ে একটি বাফার প্রদান করতে পারে এবং আপনাকে মানসিক শান্তি দিতে পারে। তাছাড়া চাকরির পাশাপাশি একটি ' প্যাসিভ ইনকাম ' এর উপায় খুঁজে বের করতে চেষ্টা করুন।


● আপনার দক্ষতা বাড়ান এবং বিপণনযোগ্য থাকুন: 

ক্রমাগত শেখা এবং দক্ষতা বিকাশ আপনার নিয়োগযোগ্যতা বাড়াতে পারে। কাজের জগতে নতুন ট্রেন্ড বা প্রবণতা সম্পর্কে আপডেট থাকুন এবং চাহিদা রয়েছে এমন নতুন দক্ষতা অর্জন করতে সর্বদা প্রয়াস নিন। এটি শুধুমাত্র আপনার চাকরির সম্ভাবনাকে উন্নত করে না বরং আপনার আত্মবিশ্বাসকেও অনেক টা বাড়িয়ে তোলে এবং উদ্বেগ কমায়, আপনার কাছে যেকোনো নিয়োগ কারী সংস্থা কে অফার  করার জন্য মূল্যবান দক্ষতা রয়েছে, তা যখন উপলব্ধি করেন তখন আপনি অনেকটাই রিলাক্স থাকতে পারবেন।


● নেটওয়ার্ক তৈরী করা এবং প্রয়োজনে সহায়তা চাওয়া :

নেটওয়ার্কিং নতুন কাজের সুযোগ তৈরি করতে পারে এবং কঠিন সময়ে সহায়তা প্রদান করতে পারে। শিল্প ইভেন্টগুলিতে যোগ দিন, পেশাদার গোষ্ঠীতে যোগ দিন এবং সহকর্মী এবং পরামর্শদাতাদের সাথে জড়িত হন যারা আপনাকে সঠিক নির্দেশনা  এবং পরামর্শ দিতে পারেন। সহায়ক বন্ধু বা পরিবারের সদস্যদের সাথে আপনার উদ্বেগ শেয়ার করা উদ্বেগ কমাতে ও স্ট্রেস - ফ্রী থাকতে সাহায্য করতে পারে। 


● স্ব-যত্ন অনুশীলন করুন : 

এমন ক্রিয়াকলাপগুলিতে জড়িত হন যা দেহ-মনের প্রশান্তি  এবং সামগ্রিক সুস্থতাকে উন্নীত করে। নিয়মিত ব্যায়াম, মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন  বা মননশীলতা ধ্যান, গভীর শ্বাসের ব্যায়াম বা  ডিপ ব্রীদিং এক্সারসাইজ এবং যে কোনো শখ বা হবি তে মনোনিবেশ করা আপনার উদ্বেগ কমাতে পারে এবং আপনাকে একটি ইতিবাচক মানসিকতা বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে। অনিশ্চয়তার সময়ে আপনার শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 


● প্রয়োজনে পেশাদার সহায়তা নিন : 

যদি উদ্বেগ অব্যাহত থাকে এবং আপনার দৈনন্দিন জীবনকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করে, তাহলে একজন মানসিক স্বাস্থ্য পেশাদারের কাছ থেকে সহায়তা চাওয়ার কথা বিবেচনা করুন। তারা আপনার নির্দিষ্ট পরিস্থিতি অনুযায়ী মোকাবিলা করার কৌশল প্রদান করতে পারে এবং মূল্যবান দিকনির্দেশনা দিতে পারে। 

মনে রাখবেন যে চাকরির নিরাপত্তা প্রায়শই একটি সাধারণ উদ্বেগ, এবং অনেক লোকই এই সমস্যা সম্পর্কিত উদ্বেগ অনুভব করে। এই কৌশলগুলি বাস্তবায়ন করে এবং সমর্থন খোঁজার মাধ্যমে, আপনি এই অনিশ্চয়তার সময়টিকে আরও কার্যকরভাবে নেভিগেট করতে পারেন এবং সফল না হোয়া অবধি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার মতো যথেষ্ট মানসিক শক্তি খুঁজে পাবেন।।


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ডিপ্রেশন কে হালকা ভাবে নিয়ো না

2023 এ সুস্থ থাকতে ও অতিমারী থেকে বাঁচতে আজই শিখে নাও ডিপ ব্রীদিং