Emotional Intelligence কী?

আমরা অনেকেই মনে করি ' আবেগ ' ( Emotion ) আর ' বুদ্ধিমত্তা ' ( Intelligence ) অনেকটা পরস্পর বিরোধী , এরা পাশাপাশি চলতে পারে না। আবার আমাদের কারো কারো মনে এমন একটা প্রচ্ছন্ন ধারণাও  রয়েছে যে  , বুদ্ধিমান মানুষ সাধারণত আবেগ প্রবণ হন না , আবার উল্টো দিকে আবেগী মানুষ খুব কম ক্ষেত্রেই  বুদ্ধিমান হন। এই ধারণা টা কিন্তু একশ শতাংশ সঠিক নয়। মজার ব্যাপার হলো ' আবেগ ' ও ' বুদ্ধিমত্তা ' র সঠিক মিশ্রণে  যে কারোর ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠতে পারে আকর্ষণীয় , অনন্য সাধারণ। এই বিশেষ গুণকে ই Emotional Intelligence বা " আবেগ জনিত বুদ্ধিমত্তা "  বলে। এই গুণটি থাকলে, আর পাঁচ জনের  থেকে সহজেই তোমাকে আলাদা করে চেনা যাবে। তোমার ব্যাক্তিগত ও সামাজিক জীবনে  সম্পর্ক গুলি আরও ভালো হবে , নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতা ( leadership skill ) আসবে , সবাইকে নিয়ে কাজ করতে পারবে সহজেই । ইন্টিয়ূশন বাড়বে। যে কোনো পেশায় সফল হবার সম্ভাবনা বাড়বে।  বিভিন্ন পেশায় সফল ব্যক্তিদের উপর করা এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, পেশাগত জীবনে সাফল্যের পেছনে প্রফেশনাল নলেজ ( I Q ) থেকেও ইমোশনাল ইন্টিলিজেন্স বা E Q এর ভুমিকা অনেক বেশী। 

Emotional Intelligence



এখানে আমরা বুঝতে চেষ্টা করবো ইমোশনাল ইন্টিলিজেন্স (E Q) কি ? ইমোশনাল ইন্টিলিজেন্স এর মূল উপাদান বা কম্পোন্যান্ট  গুলি কী ? একজন ইমোশনাল ইন্টিলিজেন্ট ব্যক্তির মধ্যে কি কি বিশেষ গুণ দেখতে পাওয়া যায় ? E Q বাড়ানো যায় কীভাবে ? 

Emotional Intelligence বলতে ঠিক কী বোঝায় ?

ইমোশনাল ইনটিলিজেন্স বা আবেগজনিত বুদ্ধিমত্তা হলো এমন এক বিশেষ গুণ বা ক্ষমতা  যার জন্য ব্যক্তি তার নিজের আবেগ গুলিকে সঠিক রূপে শনাক্ত করতে পারে, পরিবেশ অনুযায়ী সেগুলিকে সঠিক দিশায় পরিচালন ও প্রয়োজনে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয় । শুধু তা ই নয় , এরা যথেষ্ট সেনসিটিভ হওয়ায় সহজেই  অন্যদের ইমোশনাল স্টেট অনুধাবন করে সেই অনুযায়ী  পরিস্থিতিকে handle করতে পারে। এই বিশেষ গুণের জন্যই মানুষ তাদেরকে পছন্দ করে। conflict কম হয়। লোকেরা  তাদের সাথে থাকতে / কাজ করতে সচ্ছন্দ বোধ করে। 

ইমোশনাল ইন্টিলিজেনস এর মূল উপাদান :

1. Self awareness :

 আত্মসচেতনতা। নিজের এবং নিজের আবেগ সম্পর্কে সপুর্ণ সচেতনতা। ঠিক কী পরিস্থিতিতে নিজের মধ্যে কী ধরণের আবেগ ট্রিগার হচ্ছে তা পর্যবেক্ষণ ও শনাক্ত করা। নিজের প্রতি সৎ থাকা ও নিজেকে এক্সেপ্ট করা। নিজের লিমিটেশন সম্পর্কেও ধারণা থাকা জরুরী। Open to suggestions. শেখার মানসিকতা।

2. Regulate and managing emotions :

 যার নিজের ইমোশন ও তার ট্রিগার  সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকে, সে খুব সহজেই নিজের আবেগ কে শনাক্ত করে তাকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারে। আবেগের তাৎক্ষনিকতায় ভেসে না গিয়ে , সচেতন ভাবে নিজের আবেগ কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। 'নিয়ন্ত্রণ করা' মানে কিন্তু আবেগ কে অস্বীকার করা বা দমন করা নয়, আবেগ কে সঠিক সময়ে , সঠিক উপায়ে , সঠিক জায়গায় প্রকাশ করা। আমরা সাধারণত কারোর বলা কোনো কথা' য় ( literally কী mean করছে সেই অনুযায়ী ) তাৎক্ষণিক ভাবে রিয়েক্ট করে ফেলি , এতে অনেক সময় পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে । কিন্তু একজন emotional intelligent মানুষ ওই কথার পেছনে যে আবেগ লুকানো আছে সেটা শনাক্ত করে সেই অনুযায়ী রেসপন্ড করার চেষ্টা করবে । এটা একটা আর্ট। প্র্যাকটিসে ধীরে ধীরে perfection আসে। 

3. Empathy

দয়া , করুণা এবং সহমর্মিতা - এই তিনটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য " ইমোশনাল ইন্টিলিজেন্ট " ব্যক্তির  মধ্যে দেখা যায় । এরা যেহেতু যথেষ্ট সেন্সিটিভ হয় তাই শুধু নিজের ই নয় অন্যের ইমোশনস ও বুঝতে পারে। এরা সাধারণত খুব ভালো শ্রোতা ও অন্যের সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়। অন্যের দৃষ্টিভঙ্গি বোঝা ও সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে ওরা পারদর্শী । sharing & caring attitude , আন্তরিক ভাবে ওরা অন্যদের সাহায্য, সহযোগিতা করে থাকে । জাজ্মেন্টাল না হয়ে , অন্যের পজিটিভ গুণাবলি কে সবসময়  এনকারেজ করে।  অন্যদের ভালো কিছুর জন্য  inspire ও motivate করে। এই জন্যেই এরা টীমপ্লেয়ার হিসেবে সহজেই নজর কাড়ে। নেতৃত্ব দিতেও দারুণ ভাবে সক্ষম। 

4. Relationship management

মানুষ সামাজিক প্রাণী। বিচ্ছিন্ন ও একক ভাবে সে  হয়তো কোনো রকমে টিকে থাকতে পারে ঠিক ই , কিন্তু  না পারে সে জীবনে কোনো বড়ো সাফল্য অর্জন করতে , না পারে সুখী ও সন্তুষ্ট থাকতে । একাকী বিচ্ছিন্ন জীবনে আসে হতাশা । অন্যের কাছ থেকে এটেনশন , এপ্রিসিয়েশন, সাহায্য,
সহযোগিতা  স্বাভাবিক ভাবেই মানুষ প্রত্যাশা করেতুমি হয়তো ভাবছো , আমি যদি  আমার  কাজটা  মনোযোগ দিয়ে করি , নিজের  100% দেই , তাহলে আমাকে সফল হতে আটকাবে কে?? মজার ব্যাপার হলো, নিজের সবটুকু এফোর্ট দিয়ে তুমি কোনো একটি বিষয়ে পারফেক্ট হতে পারো, বা কোনো একটা নির্দিষ্ট স্কিল অর্জন করতে পারো , কিন্তু এটা কোনো কাজেই আসবে  না যদি তুমি পেশাগত বা সামাজিক জীবনে এর সঠিক মূল্য না  পাও ( নেম , ফেম, পজিশন, মানি এবং রিলেশন )। আর এই অর্জিত জ্ঞান বা স্কিল এর সঠিক মূল্যায়ণ তখন ই হবে যখন তুমি মানুষ কে নিয়ে / মানুষের সাথে / মানুষের জন্য কাজ করতে পারবে। এমন উদাহরণ তোমার চারপাশে প্রচুর আছে। অনেক গুনী শিল্পী আছেন, যাঁরা দীর্ঘদিন নিরলস ভাবে সঙ্গীত সাধনা করে আসছেন , কিন্তু তেমন মূল্যায়ণ হয় নি। থেকে গেছেন প্রচারের বাইরে। আবার এমনো দেখবে , হয়তো খুব বড়ো ডাক্তার , প্রচুর পড়াশোনা , গাদা গাদা রিসার্চ পেপার আছে , কিন্তু রোগীর তেমন ভীড় নেই, বিপদে না পরলে কেউ যেতে চায় না। সহকর্মীরাও তাঁকে তেমন পছন্দ করে না। আবার হয়তো দেখবে, অফিসের সবচেয়ে বেশী পড়াশোনা / কাজ জানা লোক টা কাজ করছেন অপেক্ষাকৃত কম জ্ঞান সম্পন্ন কারোর অধীনে। এই ধরণের মানুষ সাধারণত রিসার্ভ, ডিপ্রেসড এবং বদমেজাজি হয়ে থাকেন । কারণ তাঁরা বুঝতে পারেন এঁদের প্রতিভার অবমূল্যায়ণ হচ্ছে। হবে না ই বা কেন? একটা সোশাল স্ট্রাকচারে, কাজের / প্রতিভার মূল্যায়ণ তখন ই হবে যখন মানুষের কাছে সেটার গ্রহণযোগ্যতা থাকবে , আমার 'সোশাল স্কিল' যদি জিরো ( শূন্য ) হয় , তাহলে লোকে আমার বা আমার কাজের ব্যপারে উৎসাহী কেনো হবে !!?? লক্ষ্য করলে দেখবে, আমাদের ব্যাক্তিগত, পেশাগত ও সামাজিক সম্পর্ক গুলি সব ই transectional ( আদান-প্রদান ভিত্তিক ) , এগুলিকে মেন্টেইন করতে হয়। ইমোশনাল ইন্টিলিজেন্ট ব্যক্তিরা ব্যক্তিগত ও সামাজিক স্তরে গুরুত্বপুর্ণ সম্পর্কগুলিকে সুন্দর ভাবে ম্যানেজ করতে সক্ষম হয়। 



● ইমোশনাল ইন্টিলিজেন্ট ব্যক্তির সাত টি উল্লেখযোগ্য চারিত্রিক বৈশিষ্ট

🔷️ এরা সাধারণত প্রাণচঞ্চল , হাসি খুশি ও মিশুকে হয়। 

🔷️ যেহেতু এরা নিজের ইমোশন কে বুঝতে পারে তাই পরিস্থিতি অনুযায়ী একে সঠিক দিশায় পরিচালিত করতে সক্ষম।

🔷️ এরা দায়িত্ব নিতে ভয় পায় না। আত্মবিশ্বাসী ।  নিজের ভুল - ত্রুটি স্বীকার করতে কখনো পিছুপা হয় না।

🔷️ সেনসিটিভ ও  নমনীয় স্বভাবের কারণে এরা কাউকে আঘাত দিয়ে কথা বলে না বা অন্যকে অযথা  ক্রিটিসাইজ করে না। উপরন্তু পজিটিভলি যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে। এদের মনোযোগ সবসময় প্রব্লেম সলভিং এর দিকে থাকে। কনফ্লিক্ট ম্যানেজ করতে সক্ষম। 

🔷️ অন্যদের ব্যপারে জানতে আগ্রহী। লোক কে অবসার্ভ করতে ভালোবাসে। ভালো শ্রোতা । অন্যের ইমোশনস সহজেই বুঝতে পারে। সেই অনুযায়ী রেসপন্ড করে। 

🔷️ এরা সবসময় নতুন কিছু শিখতে/ জানতে আগ্রহী । এদের Intuition  যথেষ্ট ভালো হয়। পরবর্তী পরিস্থিতি কী হতে চলেছে , আগেই বুঝতে পারে এবং সেই অনুযায়ী স্টেপ নেয়।

🔷️ পরোপকারী। অন্যদেরকে জেনুইনলি সাহায্য করতে চায়, ফাঁকা জ্ঞান দেয় না। টীম প্লেয়ার । লোকে এদের সাথে থাকতে / কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। 

দৈনন্দিন জীবনে Emotional Intelligence কে আমরা অনেক সময়  না জেনে শুনেও কাজে লাগাই 👇






এই পর্যন্ত  আলোচনা থেকে আশা করি ইমোশনাল ইন্টিলিজেন্স ( E Q ) সম্বন্ধে একটা সুস্পষ্ট ধারণা পেয়েছো। পরবর্তীতে, কিভাবে E Q বাড়ানো যায়? সে বিষয়ে আলোচনা করবো , এবার  বল তো , প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ড: মনমোহন সিং ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে কার E Q বেশী ?? তোমার কি মনে হয় ?


তথ্য সহায়তা :









মন্তব্যসমূহ

  1. দারুণ লাগলো লেখাটা। অনেক নতুন তথ্য জানতে পারলাম। নতুন লেখার অপেক্ষায় রইলাম। 👌👌

    উত্তরমুছুন
  2. Thanks নেক্সট আর্টিকেল এর লিঙ্ক এখানেই দেয়া আছে। (কিভাবে E Q বাড়ানো যায়?)

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ডিপ্রেশন কে হালকা ভাবে নিয়ো না

চাকরি হারানোর ভয় কি আপনাকে রাত দিন তাড়া করে বেড়াচ্ছে?

2023 এ সুস্থ থাকতে ও অতিমারী থেকে বাঁচতে আজই শিখে নাও ডিপ ব্রীদিং