জীবনে যখন কোনো কিছুই ঠিক ঠাক চলছে না, হতাশার কালো মেঘ ঘনিয়ে আসছে চারিদিকে, তখন পজিটিভ থাকাটা ই হয়ে উঠে একমাত্র সম্বল, লড়াই করে যাওয়ার। অনেকের মনেই এই প্রশ্নটা থাকে, কঠিন সময়ে কী উপায়ে পজিটিভ ও মোটিভেটেড থাকা যায়? নেতিবাচক চিন্তা ভাবনা দূর করার উপায় ই বা কি? এখানে আমরা বোঝার চেষ্টা করবো, পজিটিভ থাকা মানে কি? পজিটিভিটি কেনো এতো ইমপরট্যান্ট? পজিটিভ থাকার জন্য কী করা যেতে পারে?
পজিটিভিটি নিয়ে কথা বলতে গেলে, আগে মন নিয়ে দু- একটি কথা বলতে হয়। প্রকৃতি গত ভাবে আমাদের মনের দুটি অত্যন্ত শক্তিশালী ক্ষমতা রয়েছে যথাক্রমে 1) স্মৃতি শক্তি( memory), এবং 2) কল্পনা শক্তি ( imagination )। এই দুটি ক্ষমতার সঠিক ব্যবহারেই মানুষ আজ শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা অর্জন করতে পেরেছে, যা অন্য প্রাণীকুল পারেনি। প্রকৃতি এই বিরল ক্ষমতা অন্য সকল প্রাণীদের কে দেয় নি। স্বাভাবিক ভাবে আমাদের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ মনের এই দুটি বিশেষ ক্ষমতা ই আবার ক্ষেত্র বিশেষে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। মনের উপর যাদের একেবারেই নিয়ন্ত্রণ নেই , বা মনের অসীম শক্তিকে যারা সঠিক পথে পরিচালনা করতে পারে না , তাদের ক্ষেত্রেই এই বিপদ বেশী।
পজিটিভ থাকা মানে কি?
অনেকেই মনে করে পজিটিভ থাকার মানে হচ্ছে মনে কখনো নেতিবাচক চিন্তা আসবে না। যা খুশি হোক আমাকে পজিটিভ থাকতেই হবে সবসময়। পজিটিভ থাকার মানে কিন্তু আদতে তা নয়। একটা উদাহরণ দিলে ব্যাপার টা স্পষ্ট হবে। মনে কর, তুমি সাঁতার জানো না, এই অবস্থায় যদি তোমাকে জলে ঝাঁপ দিতে বলা হয়! কী হবে? ভয় পাবে। বিপদের আশঙ্কায় মন কুঁকড়ে যাবে। নেতিবাচক চিন্তায় মন আচ্ছন্ন হয়ে থাকবে। এটাই স্বাভাবিক। এখানে পজিটিভ থাকার মানে কিন্তু ' জলে ঝাঁপিয়ে পড়া নয় '। পজিটিভ থাকা মানে হচ্ছে , মন যে ভয়ের সিগনাল দিচ্ছে তাকে এক্সেপ্ট করা, পরিস্থিতি বিবেচনা করে কী করে সেই বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় সেদিকে প্রয়াস করা।
কেনো পজিটিভ থাকা টা গুরুত্বপূর্ণ :
আমাদের মনের প্রকৃতি ই হচ্ছে অতীতচারন ( স্মৃতি ) বা ভবিষ্যতের ভাবনায় ( কল্পনা ) বিভোর থাকা। একটু লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারবে , দিনের বেশিরভাগ সময় মন এই দুই জায়গাতেই বিচরণ করে। নেগেটিভিটির মূল কারণই হলো , অতীতের নেগেটিভ এক্সপেরিয়েন্স অথবা অজানা ভবিষ্যত সম্পর্কে কাল্পনিক আশঙ্কা বা ভীতি। মন তো বারেবারে এগুলিকে ই হাইলাইট করে, ফলে নেতিবাচক চিন্তা ভাবনা মস্তিষ্ক কে আচ্ছন্ন করে ফেলে। আমরা অকারণে ভয় পেতে শুরু করি , সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগি , ব্যর্থতা র ভয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজকে এড়িয়ে চলি বা প্রোকাস্টিনেট করতে শুরু করি, ধীরে ধীরে আমাদের আত্মবিশ্বাস কমতে শুরু করে। ভুলে গেলে চলবে না ,জীবন মানেই সংঘর্ষ , টিকে থাকতে গেলে প্রতি মুহুর্তে লড়াই করতে হয়। আর এই লড়াই টা চালিয়ে যেতে পজিটিভ থাকাটা ভীষণ জরুরী।
কী উপায়ে পজিটিভ থাকা যায়?
☆ নিজেকে ভালবাসো - নিজেকে সম্পূর্ণ রূপে এক্সেপ্ট কর। নিজের প্রতি যত্নশীল হও ।কোন বিষয় গুলির পরিবর্তন করতে চাইছো সেগুলির একটা তালিকা তৈরী কর। এর মধ্যে থেকে সবচেয়ে সহজ যেটা মনে হবে , সেটার উপরে কাজ করতে শুরু কর।
☆ লক্ষ্য স্থির কর - জীবনের একটা সামগ্রিক লক্ষ্য থাকা জরুরী। লক্ষ্যহীন মানুষ সহজেই নেতিবাচক চিন্তাধারার শিকার হয়।আলটিমেটলি তুমি কি চাইছো? যে কাজ ই তুমি করতে চাইছো বা যা কিছু তুমি এচিভ করতে চাইছো , তা কেনো চাইছো? এই কেনো? র উত্তরটা নিজের কাছে স্পষ্ট থাকতে হবে।
☆ নিয়মিত শরীরচর্চা - শরীরের যত্ন নিতে হবে। নিয়মিত রূপে 45 মিনিট মিডিয়াম অথবা হাই ইনটেনজিটি এক্সেরসাইজ রক্তনালী কে প্রসারিত করে, মাংসপেশী কে রিলাক্স করে ও দেহের অক্সিজেন এর মাত্রা বৃদ্ধি করে । নিয়মিত এক্সেরসইজে রক্তে ডোপামিন হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় স্ট্রেস হরমোন করটিসল এর কুপ্রভাব থেকে দেহকে রক্ষা করে এবং মনকে পজিটিভ ও রিলাক্স থাকতে সাহায্য করে।
☆ মেডিটেশন ও প্রাণায়াম - নিয়মিত রূপে ধ্যান অভ্যাসে মনের অকারণ চঞ্চলতা দূর হয় , মন স্থির ও কেন্দ্রীভূত থাকে। বিভিন্ন সময়ে করা গবেষণায় এটা প্রমাণিত যে যারা নিয়মিত মেডিটেশন এবং প্রাণায়াম এর মতো কোনো ব্রীদিং টেকনিক অভ্যাস করেন , তারা অনেক বেশী পজিটিভ থাকেন।
☆ নেগেটিভ লোকেদের থেকে দূরে থাকো - বন্ধুত্ব কর পজিটিভ মানসিকতার লোকের সাথে। তাদের সাথে নিজের মনোভাব শেয়ার কর। ছোটো বাচ্চাদের সাথে সময় কাটাও, ওদের সাথে খেল।
☆ নিজের পছন্দের হবি বেছে নাও - হবি বা সখ থাকতেই হবে এমন কোনো কথা নেই। থাকলে সেদিকে ফোকাস কর, আর যদি না ও থাকে কোনো চিন্তা নেই। হবি যে কোনো বয়সেই ডেভেলপ করা যায়। সে হতে পারে গার্ডেনিং, ছবি তোলা, রান্না করা , বিদেশী কোনো ভাষা শেখা , নতুন কোনো বাদ্যযন্ত্র বা অন্য কিছু।
☆ বই হতে পারে ভালো সঙ্গী -
যখন চারিদিকে কোনো কিছুই ঠিক চলছে না তখন হাতে তুলে নাও এমন কোনো বই , যা তোমাকে ইন্সপায়ার করে , মোটিভেট করে। তাছাড়া সোশিয়াল মিডিয়ায় পছন্দের মোটিভেশনাল স্পিকার কেউ থাকলে তাঁকে ফলো করতে পারো। তাছাড়া ভালো গান শুনতে পারো।
☆ প্রাণ খুলে হাসো - হাসতে পারা টা একটা দারুণ কগ্নিটিভ স্কিল যা তোমাকে পজিটিভ থাকতে সাহায্য করবে। এটাও একটা অভ্যাসের ব্যাপার। অনেকে মনে করে হাসার মতো যথেষ্ট কারণ না থাকলে হাসা যায় কিভাবে? মজার ব্যাপার হলো , আনন্দ পেলে, শারীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়া হিসাবে যেমন হাসির উৎপত্তি হয়, আবার তার ঠিক উল্টোটা ও কিন্তু ঘটে , অর্থাৎ তুমি যদি হাসতে থাকো তবে দেহ-মনে ক্রমশ আনন্দের অনুভূতি ছড়িয়ে পড়বে। এই সূত্রের উপর ভিত্তি করেই তো ' লাফিং থেরাপী ' আবিষ্কৃত হয়েছে! সুতরাং, এবার থেকে বাচ্চাদের মতো ছোটো ছোটো উপলক্ষ্য খুঁজে নাও, প্রাণ খুলে হাসতে থাকো।
পরিশেষে একটা কথা মনে রাখতে হবে, দু:সময়ের মধ্যেও পজিটিভ থাকতে গেলে সেরকম এটিটিয়ুড ডেভেলপ করতে হয় , এই এটিটীয়ুড আসে এক্সপেরিয়েন্স থেকে, শেখার মানসিকতা থেকে, ভালো প্রিপারেশন থেকে। সুতরাং হার না মেনে চেষ্টা করতে থাকো, শিখতে থাকো , হাসি মুখে এগিয়ে যাও।
খুব ভালো লাগলো পড়ে।👌👌
উত্তরমুছুন