ভয় কে জয় করার উপায়
ভয় আসলে কি?
ভয় আমাদের মনো-স্নায়বিক প্রতিক্রিয়া যা অনাগত বিপদ সম্পর্কে আমাদের কে সজাগ ও সচেতন করে। সাবধানতই আমাদেরকে বিপদ থেকে রক্ষা করে। জন্ম থেকেই আমরা ভয় কে সাথে নিয়েই জন্মাই । তখন শুধু দুই ধরনের ভয় ই থাকে, এক 'উচ্চতার ভয়' আর দ্বিতীয় টা 'জোড়ে শব্দের' ভয়। 'ভয়' কে ভয় পেলে চলবে না। ভয় কে নিয়েই চলতে হবে, শুধু খেয়াল রাখতে হবে ভয় পাওয়া টা যেন অভ্যাসে পরিণত না হয়, আমরা যেন অনাবশ্যক ভয়ে আচ্ছন্ন না হয়ে পড়ি। অনাবশ্যক ভয়ে আচ্ছন্ন হয়ে নিজেকে গুটিয়ে নেয়া টা ই সমস্যা। চলো আরেকটু বিশদে জানার চেষ্টা করি।
শরীরে ভয় এর প্রভাব :
যখনই আমরা কোনো কারণে ভয় পাই, তখন শরীরে কিছু লক্ষণ দেখা যায়, যেমন দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস , হার্ট বিট বেড়ে যাওয়া, বা হৃদকম্প,শ্বাস নিতে কষ্ট, শরীর ভারী বোধ করা বা অবশ হয়ে যাওয়া, মাথা ঝিম ঝিম করা ইত্যাদি । এছাড়াও রয়েছে কিছু সদর্থক বা ইতিবাচক প্রভাব যেমন ব্যথা-বেদনার অনুভূতি প্রশমিত করে , একাগ্রতা বৃদ্ধি করে , সচেতনতা বাড়ায় ও স্নায়ু কে সজাগ করে।
আমরা কেন ভয় পাই ? / ভয় এর মুখ্য কারণ সমূহ :
1. অন্ধকার বা দৃষ্টিতে বাধাদায়ক পরিবেশ।
2. কোনো বিশেষ পোকা-মাকড় বা প্রাণী বিশেষ। যার সাথে কোনো অতীত অভিজ্ঞতা বা কাল্পনিক ভীতি জড়িয়ে আছে।
3. কোনো বিশেষ পরিবেশ সম্পর্কে ভীতি যেমন উচ্চতা, বন্ধ ঘর বা লিফ্ট এ চড়া ।
4. উপহাস বা প্রত্যাখ্যানের ভয়। যেমন স্কুল এ বা চাকুরিস্থলে প্রথম দিন, কোনো ইন্টারভিউ , পাব্লিক স্পিকিং,' স্টেজ ফবিয়া ' ইত্যাদি ।
5. মৃত্যু ভয়। হতে পারে নিজের বা কোনো প্রিয়জনের। বিচ্ছেদের ভয়।
ভয় এর মুখ্য কারন গুলিকে যদি আমরা পর্যালোচনা করি তাহলে মূলত তিন টি কারণ খুঁজে পাই যেগুলি কম বেশী আমাদের সবার মধ্যেই আছে। প্রথমত অজানা কোনো কিছু ফেস করার ভয়, দ্বিতীয় ব্যর্থতা বা প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ভয় আর তৃতীয় কারণ টা হলো মৃত্যু ভয়। আসো জেনে নেই কি ভাবে এগুলিকে ম্যানেজ করা যায় -
ভয় থেকে মুক্তির উপায় : how to overcome fear?
🔷️ ভয় কে এক্সেপ্ট করতে শেখো। এটা বুঝতে হবে যে, ভয় একটা অনুভূতি, এক ধরণের এনার্জিও বলতে পারো । বৈজ্ঞানিক ভাষায় বললে এক ধরণের মনো-স্নায়বিক প্রতিক্রিয়া যার উদ্রেক হয় মূলত কোনো ক্ষতি বা আঘাতের আশঙ্কা থেকে। হতে পারে তা শারীরিক , মানসিক বা সামাজিক। ভয় আমাদের সতর্ক করে। আমাদের কাজ হলো এই সিগনাল গুলিকে বিচার বিশ্লেষণ করে দেখা আদৌ ভয়ের কিছু আছে কি না! যদি কিছু থাকে, সে ভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।
🔷️ ভয়ের চোখে চোখ রাখো। ভয় এর জিনিস থেকে পালিয়ে যেও না, ভয় আরও বাড়বে। ভয়ের কারণ কে পর্যবেক্ষণ কর, ভয়ের সাথে মনে মনে সময় কাটাও। এক্ষেত্রে সব চেয়ে খারাপ কি পরিস্থিতি/ পরিণতি হতে পারে তা কল্পনা কর। দেখবে ভয় ধীরে ধীরে কেটে যাবে। ভয় কে ফেস করো, কমফর্ট জোন থেকে বেরিয়ে এসো, জয় তোমার নিশ্চিত।
🔷️ জীবনে পারফেক্ট বলে কিছু নেই। সব সময় সব জায়গাতে তুমি পারফেক্ট হবে, লোকে বাহবা বাহবা দেবে এমন কোনো কথা নেই। ভুল ভ্রান্তি হবেই। ভুল করা শেখার ই অঙ্গ। মনে রাখবে ভুল করছো মানে কিছু শিখছো।
🔷️ " পাছে লোকে কিছু বলে..."। হ্যা আমাদের ভীতির এক বড়ো অংশ জুড়ে রয়েছে এই ভাবনাটি । লোকে কি বলবে / ভাববে? বিশ্বাস করো এতে কিচ্ছুটি এসে যায় না। জীবনের আশি শতাংশ কাজ আমরা করতে পারি না এই ভাবনা টির জন্য। যে কাজ তুমি করতে চাও , তার উপর যদি তোমার একশ শতাংশ বিশ্বাস থাকে , ঝাঁপিয়ে পড়ো। রেসাল্ট এর ভাবনা না ভেবে, কাজে মনোযোগ দাও। কি ভাবে তোমার হান্ড্রেড পার্সেন্ট দিতে পারো সেদিকে লক্ষ্য রাখো, কে কি বললো এতে কিচ্ছু এসে যায় না। ভালো প্রস্তুতি ভয় কে অনেকাংশেই কমিয়ে দেয়।
🔷️ জীবণ অনিশ্চিত, মৃত্যু নিশ্চিত। মৃত্যু থেকে আমাদের কারোর নিস্তার নেই। সবাইকেই যেতে হবে একদিন। কেউ আগে, কেউ বা একটু পরে। এই বাস্তব সত্য টা কে যতো তাড়তাড়ি একসেপ্ট করবে, জীবন ততটাই সহজ, সুন্দর ও ভয় মুক্ত হবে। জীবণ সমৃদ্ধ হয় অভিজ্ঞতায়, অভিজ্ঞতা আসে প্রয়াস/ প্রচেষ্টা থেকে, নতুন কিছু কে জানার বা করার মধ্য দিয়ে। ব্যর্থতা প্রয়াসের ই অঙ্গ। ব্যর্থতার ভয়ে ভীত হয়ে বসে পড়া মূর্খতার পরিচায়ক। অনাবশ্যক কারণে ভয় আমাদেরকে মানসিক ভাবে দুর্বল করে, নতুন কিছু করার মতো মানসিক শক্তি থাকে না। যে সব ভয় তোমার স্বপ্ন গুলিকে জোড় করে দাবিয়ে রাখে, তাদেরকে জীবণ থেকে ছুড়ে ফেলো। ভয় কে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে রুখে দাঁড়াও, তুমি ই জিতবে।
🔷️ স্বাবলম্বী হও। পরিশ্রম কর, জীবনে যা কিছু পেতে চাও তা নিজের যোগ্যতায় অর্জন করো। অন্যের উপর কোনো কিছুর জন্য নির্ভরশীল হয়ো না। প্রত্যাশা কমাও। স্বাধীন ভাবে বাঁচতে চেষ্টা করো।
🔷️ সৃস্টিকর্তার উপরে আস্থা রাখো। যিনি তোমাকে এই জীবণ দিয়েছেন, এই বিশ্ব-ব্রম্হান্ডের রচয়িতা যিনি, উনি অবশ্যই মঙ্গলময়। যে কোনো বিপদে উঁনাকে স্মরণ করো, উনি ই সাহস জোগাবেন। প্রার্থনা মনকে ভয় মুক্ত করে।
এই প্রসঙ্গে একটি গল্প মনে পড়লো, শোনো তবে,
অনেক দিন আগে, কোনো এক রাজ্যে এক কুখ্যাত অপরাধী ছিলো। একবার এক জঘন্য অপরাধের জন্য রাজার সিপাইরা তাকে ধরে ফেলে ও রাজার সামনে বিচারের জন্য হাজির করে।
রাজা বিচার করতে গিয়ে ওকে দুটো অপশণ দেয়, প্রথম টা ছিলো সরাসরি ফাঁসি কাঠে ঝুলে পড়া আর দ্বিতীয় টা হলো এক প্রকান্ড নিকষ কালো, ভয়ংকর , রহস্যময় দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করা। যথারীতি ঐ কুখ্যাত অপরাধী ফাঁসির দড়ি নিজের গলায় লাগিয়ে নেয়। একেবারে শেষমুহুর্তে, ও চিত্কার করে বলে " মহারাজ, মরার আগে আমার একটা শেষ প্রশ্ন ছিলো। আমি জানতে চাই, ঐ বন্ধ দরজার পেছনে কি আছে?" এই প্রশ্ন শুনে মহারাজ মৃদু হেসে বললেন, এর উত্তর তো আমি তোমাকে দেবো না। তুমি তো জানোই , সব অপরাধীদের আমি এই দুটো অপশণ দেই। আজ পর্যন্ত কেউ ই এই দরজার পেছনে যেতে চায় নি, সবাই স্বেচ্ছাতে ফাঁসি তে ঝুলেছে । অপরাধী নিজের গলার দড়ি দেখিয়ে বললো, " মহারাজ আমি তো মরতে বসেছি , আপনি বললেও এই রহস্য আমি বাইরে কাওকে জানাতে পারবো না। কিন্তু আপনি যদি না বলেন, আমি যে মরেও শান্তি পাবো না। দোহাই আপনার , দয়া করে বলুন।" এই কথা শুনে খানিক চুপ থেকে রাজা হাসতে হাসতে বললেন, " ঐ দরজার পেছনে আছে 'মুক্তি!!"
দেখলে তো বন্ধুরা, চেনাজানা বা পরিচিত কিছু সে যতই কষ্টের হোক, তাতে আমরা স্বচ্ছন্দ বোধ করি, কিন্তু অজানা বা অচেনা কিছুকে ফেস করতে বড়ো ভয় পাই আমরা। স্বভাব গত ভাবে আমরা প্রায় সবাই এমনই।
আমার খুব প্রিয় একজন মানুষ শ্রী গৌর গোপাল দাসের এই ভিডিও টি শেয়ার করলাম, আশা করি তোমাদের ভালো লাগবে। 🙏🙏🙏
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন