নিয়মিত পড়াশোনা করেও পড়া মনে রাখতে পারছো না? জেনে নাও কিছু সুপার হ্যাক
Image by - pixabay
পড়া বিষয় গুলিকে মনে রাখার প্রাথমিক শর্ত হলো মনোযোগ ও রেগুলারিটি । এর কোনো বিকল্প নেই। তারপরেও দেখা গেছে, অনেকেই নিয়মিত পড়াশোনা করেও পড়া বিষয় বস্তু ঠিক ঠাক মনে রাখতে পারে না। সবার মনে রাখার ক্ষমতা ( মেমরী ) সমান নয় , এটা ঘটনা। আমাদের অনেকের মধ্যেই এমন ধারণা রয়েছে , যে , মনে রাখার ক্ষমতা নির্ভর করে brain বা মস্তিস্কের উপরে । আমরা মনে করি, প্রত্যেকের মস্তিস্কের ক্ষমতা ভিন্ন হওয়া য় স্মৃতি শক্তি বা মেমরী ক্যাপাসিটিও ব্যাক্তি বিশেষে আলাদা হয়। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো , জন্ম সূত্রে আমাদের প্রত্যেকের মস্তিস্ক ও তার কার্য ক্ষমতা একই রকমের, তাতে কোনো ভিন্নতা নেই। বায়োলজিক্যালি তোমার ব্রেইন আর ক্লাসের সব চেয়ে মেধাবী ছেলেটির ব্রেইন এক ই, তফাৎ টা শুধু ফাংশনালিটি বা কার্যপ্রণালী তে। কোনো কিছু মনে রাখার যে প্রসেস ( record , retain and retrieve ) তাতে দুজনের ব্রেইন দুই রকম ভাবে রেসপন্স করে। এই ফারাক টা হয় মূলত "ব্রেন ট্রেনিং" এর বিভিন্নতা র কারণে। সঠিক এবং বিজ্ঞান সম্মত (ট্যাকনিকস) উপায়ে মস্তিস্কের এই কার্যপ্রনালীকে উন্নততর করা সম্ভব। আমাদেরকে শুধু নিজের মস্তিস্ক কে সেই ভাবে ট্রেইন করতে হয়। যে কেউ ই সেটা করতে পারে। এখানে আলোচনা করবো এমন ই কিছু কার্যকরী ও বিজ্ঞান সম্মত মেমরী ট্যাকনিকস নিয়ে , যেগুলি ফলো করলে , তোমরা খুব সহজেই যে কোনো বিষয় শিখতে ও মনে রাখতে পারবে। ফোকাসড থাকতে চাইলে পড়ে দেখতে পারো 👇
● ফোকাসড থাকো --
নতুন কোনো কিছু শেখার প্রাথমিক শর্ত হল , মনের যাবতীয় কোলাহল শান্ত করে মন কে বর্তমান সময়ে কেন্দ্রীভূত করা। মনের মধ্যে চলতে থাকা হাজারো ভাবনা গুলিকে সচেতন ভাবে সরিয়ে রেখে ফোকাস করতে হবে পড়াশোনায়। মনকে কেন্দ্রীভূত করতে পারার এই বিশেষ ক্ষমতা একদিনে আসে না। দীর্ঘ ও নিয়মিত প্র্যাকটিসে ধীরে ধীরে রপ্ত করতে পারবে। এটা এক ধরণের মানসিক ব্যায়াম। প্রতিদিন মাত্র দশ মিনিট মেডিটেশন অভ্যাসে, মন কে সহজেই যেকোনো সাবজেক্ট এ ফোকাস করতে পারার ক্ষমতা জন্মে। সুতরাং আজ থেকেই শুরু করো। তাছাড়া যে বিষয় গুলি তোমাকে ডিস্ট্রাক্ট করে সেগুলিকে সচেতন ভাবে এড়িয়ে চলো। মোবাইল , লেপটপ ইত্যাদিকে তোমার 'লার্নিঙ এইডস' হিসেবে ইউজ কর। অতিরিক্ত মোবাইল আসক্তি পড়াশোনায় মনোযোগে বাধা সৃস্টি করে। মোবাইল আসক্তি দূর করার উপায় খুঁজে বার করো। মনে রাখবে, সফল হতে সেল্ফ ডিসিপ্লিন খুব জরুরী।
● পড়া বুঝে পড়ো --
না বুঝে পড়া মুখস্থ করতে যেও না। ছোটো খাটো বিষয় মনে থাকলেও, অপেক্ষাকৃত বড়ো বিষয় মনে রাখা কঠিন হবে। যা পড়ছো তা কেনো পড়ছো , এখানে কী বলতে চাওয়া হয়েছে সেটা বুঝতে চেষ্টা কর প্রথমে। নিজের কাছে এর একটা সুস্পষ্ট মানে যেন থাকে। অনুমান কর, প্রশ্নকর্তা এই বিষয়ের উপর কী কী প্রশ্ন করতে পারেন। নিজেই ছোটো ছোটো প্রশ্ন তৈরী কর, তারপর উত্তর খুঁজে পড়ো। বড়ো ইনফরমেশন কে ছোট ছোটো অংশে ভাগ করে পড়ো। আমাদের ব্রেইন "ছোটো ও অর্থবহ ইনফরমেশন " কে সহজে প্রসেস করতে (record , retain and retrieve) পারে।
● শুধু চোখ ই নয়, নিজের কানও থাক পড়া তে --
ছোটো বেলা থেকেই হয়তো শুনে আসছো, " আওয়াজ করে পড় "। কথাটার পেছনে কিন্তু যথেষ্ট বৈজ্ঞানিক যুক্তি রয়েছে। যখন আমরা সশব্দে উচ্চারণ করে পড়ি, তখন চোখে দেখা , মনে মনে বলার পাশাপাশি এক ই পড়া নিজের কান দিয়েও শুনতে পাই। অর্থাৎ একটাই পড়া ( সেম ইনফর্মেশণ ) ভিন্ন ভিন্ন চ্যানেলে মস্তিস্কে store হচ্ছে। ফলে মেমরী তৈরী করতে মস্তিস্কে যে 'নিউরাল পাথওয়ে' সৃস্টি হয়েছে সেটা অনেক বেশী মজবুত ও ক্রিয়াশীল হয়। তাছাড়া স্পষ্ট উচ্চারণে, আওয়াজ করে পড়লে , আমাদের মধ্যে একধরনের এলার্টনেস কাজ করে যা ফোকাসড থাকতে সাহায্য করে। অনেকে আবার নিজের ইচ্ছে অনুযায়ী সুর করে পড়েও , সহজে পড়া মনে রাখতে পারে। ( নার্সারির বাচ্চাদের যেভাবে সুর করে এ বি সি ডি শেখানো হয় )
● পুনরাবৃত্তি ও লিখতে থাকা --
অপেক্ষাকৃত জটিল ও দুর্বোধ্য বিষয় কে মনে রাখতে রেপিটেশন ও রিভিসণের কোনো জুড়ি নেই। বারবার পড়তে থাকা এবং সেই সঙ্গে লিখে ফেলা। একই কাজ যখন আমরা বারবার করতে থাকি , তখন সেটা মনের সাব-কনশাস লেয়ারে পৌছে যায়। পুনঃ পুনঃ ব্যবহারে মস্তিস্কে সৃষ্ট 'নিউরাল পাথওয়ে' গুলি এতটাই কর্মক্ষম ও দ্রুততর হয়ে ওঠে যে তখন আর চেষ্টা করে পড়া বিষয়কে মনে রাখতে হয় না, এমনিতেই মনে থেকে যায়। পড়া বিষয় কে মনে রাখতে গেলে লিখে ফেলাটাও একটি কার্যকরী উপায়। সুতরাং নিয়মিত লিখতে থাকো।
● ক্রিয়েটিভিটি ও ভিজিয়ুলাইজেশন --
পড়াশোনা মানেই যে সব কিছু খুব সিরিয়াস টাইপের হবে এমন নয় মোটেও। নিজের ক্রিয়েটিভিটি ও উদ্ভাবনী ক্ষমতা কে কাজে লাগানোর যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে এখানে। পাঠ্য বিষয় কে ইন্টারেস্টিং বানাতে, গুরুত্বপুর্ণ অংশ কে হাইলাইট করা, বিভিন্ন স্টিকার বা কার্টুন ইয়ুজ করা যেতে পারে । আমাদের ব্রেইন সহজেই উজ্জ্বল ও কালারফুল ছবি বা দৃশ্য মনে রাখতে পারে। এছাড়াও শক্ত জিনিস কে মনে রাখতে এর সাথে কোনো মজাদার গল্প, জোকস বা ব্যাক্তিগত জীবনের কোনো ঘটনা বা অভিজ্ঞতা জুড়ে দিতে পার। এখানে তোমার পুর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে। নিজের মতো করে নিজের জন্য গল্প বানাও। রাখাল কে গরু চড়াতে মঙ্গল গ্রহে পাঠিয়ে দাও, কেউ কিচ্ছুটি বলবে না তোমায় । এছাড়াও নিজের মেমরিতে রয়েছে এমন কোনো কাহিনী / ঘটনা / অভিজ্ঞতা র সাথে যদি নিরস পাঠ্য বিষয়কে কোনো ভাবে জুড়ে দিতে পারো, তাহলে সহজেই কেল্লা ফতে !! এক্সপেরিমেন্ট শুরু করে দাও, করতে থাকলে খুব তাড়াতাড়ি এক্সপার্ট হয়ে যাবে।
● মনে রাখতে নেমোনিক্ বা সংক্ষেপন ( mnemonics) --
স্মৃতি শক্তি বা মনে রাখার ক্ষমতা অর্জন করতে mnemonics বহুল জনপ্রিয় একটি মেমোরি টুল। এতে সাধারণত দীর্ঘ বাক্য কে সংক্ষেপ করা হয় মনে রাখার সুবিধার্থে অথবা কোনো বিষয় বস্তুর ক্রম পর্যায় সঠিক ভাবে মনে রাখতেও এটির ব্যবহার দেখা যায়। আমরা অনেকেই এগুলি না জেনেই পড়তে গিয়ে ইউজ করেছি। বিভিন্ন রকমের নেমোনিক্ আছে , কয়েকটা উদাহরণ দিলেই ব্যাপারটা বুঝতে পারবে। যেমন-
রামধনুর সাত টি রং মনে রাখতে বেনিআসহকলা
গণিতের সমীকরণের ক্ষেত্রে যোগ, বিয়োগ , গুণ, ভাগ , বন্ধনী ইত্যাদির সঠিক ক্রমপর্যায় মনে রাখতে PEMDAS ব্যবহার হয়। অথবা Please(P) excuse (E) my (M) dear (D) aunt (A) Shally (S). এখানে সঠিক অর্ডার টি হবে যথাক্রমে
P - parentheses
E - exponents
M- multiplication
D - division
A - addition
S - subtraction
নিজের মতো করেও বানিয়ে নিতে পারো। যেমন - 4 types of exponents মনে রাখতে -
Panu(p) ও Nanu(n) শূন্য হাতে ( zero) রেশন (r) আনতে গেল।
Panu = positive ,
Nanu= negetive
শূন্য = zero
রেশন = rational
আবার ইংরেজী ব্যকরণের coordinating conjunctions মনে রাখতে ব্যবহার হয় FANBOYS
F = for
A = and
N = nor
B = but
O = or
Y = yet
S = so
সৌর মণ্ডলের গ্রহ গুলির নাম মনে রাখতে এবং ভেতর থেকে বাইরের দিকে তাদের অবস্থানের ক্রম মনে রাখতে ব্যবহার হয় একটি মজাদার বাক্য - my very educated mother just served us nine pizzas!
My = Mercury
Very = Venus
Educated = Earth
Mother = Mars
Just = Jupiter
Served = Saturn
Us = Uranus
Nine = Naptune
Pizzas = Pluto
এমন অজস্র উদাহরণ আছে। গুগল করলে পেয়ে যাবে। বিভিন্ন রকমের নেমোনিক্ টেকনিক এর মধ্যে যেগুলি তোমার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশী কার্যকর সেগুলি ইউজ কর। মেমোরি রিকল করতে নেমোনিক্ একটা দারুণ হাতিয়ার। এক্সপ্লোর কর, প্র্যাক্টিস করতে থাকো, মনে রাখা অনেক সহজ হবে।
● মেন্টরশীপ --
পড়া ভালো ভাবে বুঝতে, এবং পরবর্তীতে মনে রাখতে মেন্টরশীপ এর কার্যকরী ভূমিকা রয়েছে। নিজের বন্ধু বান্ধব বা সিনিয়র দাদা দিদি দের কাছ থেকে পড়া বুঝে নিলে বা ডাউট ক্লিয়ার করতে পারলে তা সহজেই মনে থাকে। আবার তুমি নিজেও কাউকে পড়া বোঝাতে পারো। নিজের পড়া বিষয় অন্য কাউকে বোঝাতে গেলে, আমরা ওই বিষয়কে ডিটেলে মনে রাখতে পারি। বন্ধুদের সাথে গ্রুপ স্টাডিজে সাবজেক্ট এর উপরে Q&A সেশন করতে পারো। আজকাল ইউ টিউবে যে কোনো সাবজেক্ট এর উপর দারুণ সব কনটেন্ট এভেলেবল, পছন্দের টিউটরদের ফলো করতে পারো।
শুধু মাত্র মুখস্থ করার উদ্দেশ্য নিয়ে পড়তে বসবে না। প্রব্লেম সলভ্ করার মানসিকতা নিয়ে পড়তে চেষ্টা করবে। নিজের জন্য সবচেয়ে কার্যকরী পন্থা খুঁজে বার কর। ক্রিয়েটিভ হও । বোরিং বিষয়কেও মজাদার বানাতে পারাটা ই তো আসল ক্রিয়েটিভিটি । সারাদিনের পড়া বিষয় বস্তু বা পড়া রিলেটেড যে সব এক্টিভিটি করেছো, সেগুলির রাতে শুতে যাবার আগে, মনে মনে একবার ' কুইক রিক্যাপ ' নিয়ে নেবে, মনে রাখা টা অনেক সহজ হবে।
আরও পড়তে পারো -
কোন খাবার মস্তিস্কের সুস্থতা ও কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে? Diet for healthy brain
চমৎকার লিখেছেন। অনেক উপকৃত হলাম লেখাটা পড়ে। 👌👌👌
উত্তরমুছুনধন্যবাদ। পাশে থাকবেন
উত্তরমুছুন