পড়াশোনায় কিভাবে ফোকাসড থাকা যায়?

পড়াশোনায় কিভাবে মনোযোগ বাড়ানো যায়? এই মোক্ষম প্রশ্ন টা অনেক ছাত্র-ছাত্রীর মনেই থাকে। মনোযোগের  সমস্যা টা আগেও ছিলো, কিন্তু এখনকার সময়ে বোধোয় একটু বেশীই। বাচ্চাদের মধ্যে ইদানিং মনোযোগের অভাব এবং এটেনশন স্পেন কমে যাওয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এটা এখন প্রায় সবার সমস্যা। আমরা এখানে আলোচনা করবো কিভাবে পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়ানো যায় ? এবং কোনো বিষয়ে মনোযোগ ধরে রাখতে কী করণীয়। 


পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়ানোর উপায়


মনোযোগ বাড়াতে কিছু কার্যকরী টিপস :



1.  পড়াশোনা করতে হবে নিয়মিত। এর কোনো বিকল্প নেই। রুটিন এমন ভাবে তৈরী করবে যেন অপেক্ষকৃত কঠিন ও কম ইন্টারেস্টিং সাবজেক্ট গুলোর জন্য সময়ের বরাদ্দ কিছুটা বেশী থাকে। 

2. সম্পূর্ণ সিলেবাস কে ভেঙ্গে পড়ার সুবিধার জন্য মাসিক বা সাপ্তাহিক ছোটো ছোটো টার্গেট বানাতে হবে। সাপ্তাহিক টার্গেট এচিভ করলে নিজেকে ট্রিট দিতে ভুলে যেও না। এক সাথে দুই এর বেশী সাবজেক্ট না পড়াই ভালো। 


3. একসাথে টানা দীর্ঘক্ষণ না পড়ে, সুবিধা মতো দিনে 3 / 4 টা 'স্টাডি সেশন' বানাও। মাঝে ছোটো ছোটো ব্রেক থাকবে। সেসময়ে অন্য সব প্রয়োজনীয় কাজগুলি সেরে ফেলবে।

 
4. লিখতে হবে প্রচুর। নতুন কোনো  টপিক পড়ার সময় এমন ভাবে পড়বে যেন নিজের মতো করে নোট তৈরী করতে পার। সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে মনে রাখার , যা পড়েছো তা কাউকে যদি পড়াতে পারো। বন্ধু বান্ধব , আত্মীয় স্বজন বা এমন কাউকে পড়া বোঝাতে হবে এমন ভাবনা নিয়ে পড়তে বসো। রেডি নোটস মুখস্ত না করে, নিজে নোটস বানাতে চেষ্টা করো। মনে রাখার জন্য ছোটো ছোটো ক্লু তৈরী কর।


5. সহজে মনে রাখতে নিজের কল্পনা শক্তি কে কাজে লাগাও। নিরস সাবজেক্ট কে ইন্টারেস্টিং বানাতে  নিজের মতো করে কোনো গল্প বা ছড়া বানাতে পারো যেগুলি মনে রাখতে সাহায্য করবে। যেমন কোনো সিকোয়েন্স, টেবিল, নাম বা সন-তারিখ ইত্যাদি। পড়ার বিষয় কে  ভিজুয়ালাইজ করার চেষ্টা করবে, তাতেও  মনে রাখা সহজ হবে। 


6. মনোযোগ বাড়াতে চাইলে মনোসংযোগে বাধাদানকারী বিষয় গুলিকে এড়িয়ে চলতে হবে। এর মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে মোবাইল ফোন। অতিরিক্ত মোবাইল আসক্তি কাটাতে চেষ্টা করো। পড়তে বসবে মোবাইল কে সাইলেন্ট বা সুইচ অফ করে। শুরুতে একটু অসুবিধা হলেও ধীরে ধীরে অভ্যাস হয়ে যাবে। কখনো কখনো বন্ধুদেরকেও ' না ' বলতে হতে পারে।এতে যদি বন্ধুত্ব নষ্ট হয়? হবে। কুছ পরোয়া নেই । সেভাবেই মানসিক প্রস্তুতি রাখতে হবে। 



7. সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর প্রথম এক ঘন্টা সময় খুব ভাইটাল। গুরুত্ব পুর্ণ এবং অপেক্ষাকৃত জটিল বিষয় গুলি ওই সময়ে এটেম্পট  করবে। রাতে ঘুমানোর আগে কুড়ি মিনিট সারাদিনে কী কী পড়লে সেটার একটা কুইক রিক্যাপ নেবে। 


8. নিয়মিত শরীরচর্চা, সুষম খাদ্য গ্রহণ ও পর্যাপ্ত ঘুম খুব জরুরী। বিভিন্ন গবেষণায় আজ এটা প্রমাণিত যে , নিয়মিতরূপে  মেডিটেশন  অভ্যাসে আমাদের মন স্থির ও কেন্দ্রীভুত হয়। রাত জেগে পড়াশোনা করতে গিয়ে কোনো রকম নেশার আশ্রয় নেবে না। মন সবসময় কিক্ খোঁজে, আত্মনিয়ন্ত্রণ ভীষণ জরুরী।


পড়াশোনায় মোটিভেটেড থাকতে চাইলে...


এই প্রশ্নের উত্তর টা কিন্তু খুব সহজ , আমরা বুঝতে পারি না। একটু ভালো ভাবে লক্ষ্য করলেই দেখবে , যে ধরণের কাজ গুলি একটানা দীর্ঘদিন করে যেতে হয়  এবং করতে গিয়ে তাৎক্ষণিক ভাবে কোনো ফল ( instant pleasure ) পাওয়া যায় না , সেই কাজগুলির প্রতি আমরা মোটিভেটেড থাকতে পারি না , কিছু দিনের মধ্যেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলি। আমাদের মন স্বভাবে চঞ্চল, ক্ষণিকের উত্তেজনা (kick) বা তাৎক্ষণিক আনন্দ ( instant pleasure) খুঁজে বেড়ায়। সুদীর্ঘ ও পরিশ্রম সাপেক্ষ্য কাজকে আমাদের মন এড়িয়ে চলতে পছন্দ করে, মনের স্বভাব এমন ই। তাহলে উপায়? উপায় একটা ই। সেই কাজটি করার পেছনে তোমার কাছে যথেষ্ট কারণ ( সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য ) থাকতে হবে। তাহলেই তুমি মনোযোগ সহকারে কোনো কাজ ( যেমন পড়াশোনা ) এক টানা দীর্ঘদিন করতে পারবে। একটা উদাহরণ দিলে বিষয় টা আরও স্পষ্ট হবে, মনে কর , তোমার কয়েকজন বন্ধু মেয়েদের মধ্যে জনপ্রিয় হওয়ার ইচ্ছায় , নিজেদেরকে আরও হ্যান্ডসাম ও এট্রাক্টীভ করতে জিম জয়েন করলো । ওদেরকে দেখে তুমিও ইনস্পায়ার হলে এবং জিম জয়েন করলে। জিমের পোষাক, ব্যাগ , সাপ্লিমেন্টস সব চলে এলো। জোশ একেবারে নেক্সট লেভেলের। কিছুদিন পর দেখলে " অমুক দা র মতো তো বডি হচ্ছেই না!!!" মেয়েরাও তেমন পাত্তা দিচ্ছে না। জিমে যাওয়া বোরিঙ। মন নানা বাহানা দিতে শুরু করে। মোটিভেশন শেষ। এবার আরেকটা সিন কল্পনা করো। তুমি খুব দরিদ্র পরিবারের ছেলে। ঠিক মতো খাবার জোটে না। পড়াশোনাও করতে পারো নি। আপ্রাণ চেষ্টা করছো এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার। এই সময় হঠাৎ একদিন একজন প্রতিষ্ঠিত খেলোয়াড়ের ( বডি বিল্ডার ) নজরে পরলে। উনি তোমার সব দায়িত্ব নিলেন ও তোমাকে উনার মতো প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অনুপ্রেরণা দিয়ে জিমে পাঠালেন। কী মনে হয়? এবারও কি ডিমোটিভেটেড হয়ে পড়বে?? না কখনোই নয়। এখন যে তোমার কাছে এটাই দারিদ্র্য কাটিয়ে বেড়িয়ে আসার একমাত্র হাতিয়ার ! এখন কিন্তু তুমি দুনিয়ার সমস্ত বাধা অতিক্রম করে জিমে যাবেই ।

এখানে আমরা কী শিখলাম ? পুরো খেলা টা ই আসলে মনের। নিজের মন কে কনভিন্স করতে চাইলে তোমার কাছে একটা জোরালো কারণ থাকতে হবে। শুধুমাত্র , ভালো রেজাল্টের জন্য  বা একটা ভালো চাকুরি পেতে আমাকে পড়তে হবে!!! এগুলি যথেষ্ট কারণ নয় মন কে মোটিভেট করার জন্য । কেন তুমি পড়াতে ফোকাস করতে চাইছো? একটা সলিড কারণ খুঁজে বার কর, মোটিভেশন আপনি ই চলে আসবে।




মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ডিপ্রেশন কে হালকা ভাবে নিয়ো না

চাকরি হারানোর ভয় কি আপনাকে রাত দিন তাড়া করে বেড়াচ্ছে?

2023 এ সুস্থ থাকতে ও অতিমারী থেকে বাঁচতে আজই শিখে নাও ডিপ ব্রীদিং