নিজের মনকে জানতে --- পর্ব দুই

কিভাবে মানসিক চাপ এড়িয়ে চলবো?

জীবনে কিছুটা পরিমাণ মানসিক চাপ থাকা ভালো। যেমন ধরুণ কোনো পরীক্ষা বা ইন্টারভিউ এর আগে কিছুটা মানসিক চাপ থাকা স্বাভাবিক। এতে আমরা ফোকাসড থাকি, প্রস্তুতি নিতে সুবিধা হয়। সুতরাং, সব ক্ষেত্রে মানসিক চাপ এড়িয়ে চলার প্রয়োজণ নেই। কিন্তু ছোটো ছোটো দৈনন্দিন কারণে বা প্রায় বিনা কারণে যদি আপনি অহেতুক স্ট্রেসড ফীল করতে শুরু করেন, তাহলে এটা মোটেও ভালো লক্ষণ নয়। সেই ক্ষেত্রে এই ধরণের মানসিক চাপ কাটানোর জন্য আপনাকে অবশ্যই কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে —

☆ সবচেয়ে প্রথমে, নিজেকে পারফেক্ট ভাবা বন্ধ করুন। আমরা কেউ পারফেক্ট নই। দোষ ত্রুটি সবারই আছে। অন্যেরা যা বলছে সব ভুল, আর আপনি সবসময় ঠিক এমন ভাবনা থেকে বেড়িয়ে আসুন।

☆ অন্যেদের দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার চেষ্টা করুন।

☆ প্রত্যাশা কম করুন। মনে রাখবেন এই পৃথিবীতে কেউ আপনার প্রত্যাশা পুরণ করতে আসেনি। কাউকে কারেক্ট করতে বা পরিবর্তন করার চেষ্টা করবেন না। নিজের দিকে ফোকাস করুন। নিজের দোষ ত্রুটি খুঁজে সেগুলি শোধরানোর চেষ্টা করুন।

☆ জীবনে বাস্তব সম্মত এবং ছোটো ছোটো টার্গেট সেট করুন। যেগুলি আপনি সহজে অর্জন করতে পারবেন। সুযোগ পেলেই নতুন নতুন জিনিস শিখতে থাকুন। শেখার আগেই " শিখে কী লাভ!" এমন ভাবনা ভাববেন না।

☆ লাইফে খুব বেশী সিরিয়াস হওয়ার প্রয়োজন নেই। হাসি পেলে হাসুন , কান্না পেলে কাঁদুন। জীবণ কে খেলার মতো দেখুন। প্রতিটা ম্যাচে আপনি না ও জিততে পারেন, তাই বলে কি খেলবেন না!??

☆ নিয়মিত শরীরচর্চা ও মেডিটেশন মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। 6 থেকে 8 ঘন্টা ঘুমানোর চেষ্টা করবেন।

☆ মানসিক চাপ কাটাতে মনের ভাবনা গুলিকে রাতে শুতে যাওয়ার আগে কাগজে লিখে ফেলুন। যা কিছু মনে আসছে সব। চাপ কেটে যাবে, ভালো ঘুম হবে। রোজ রাতে করবেন।

● যদি কোনো কারণে মানসিক স্ট্রেস বাড়াবাড়ির পর্যায়ে পৌছে যায়, আপনি যদি ভাবনাগুলিকে কিছুতেই কাটাতে না পারেন, তাহলে একটা কাজ করবেন। হাত মুঠো করে, বাইসেপ এর মাংস পেশী গুলিকে সমস্ত শক্তি দিয়ে প্রসারিত করুন এবং এই শক্ত অবস্থা টা কিছুক্ষণ ধরে থাকুন, যতক্ষণে পেশীতে ব্যথা না শুরু হচ্ছে। তারপরে , হাতের মুঠো খুলে, মাংস পেশী গুলিকে রিলাক্স করে দিন। এবার গভীর ভাবে 10 বার দীর্ঘ শ্বাস নিন। ধীরে ধীরে মুখ দিয়ে শ্বাস ছাড়ুন। উদ্বেগ কমে যাবে। তাৎক্ষণিক ভাবে উপকার পাবেন।

● ডার্ক চকোলেট খেতে পরেন। স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। ভিটামিন সি এবং ম্যাগনিশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার স্ট্রেস জনিত কুফল থেকে শরীর কে রক্ষা করে। সুযোগ পেলেই সব ছেড়ে ছুড়ে বছরে অন্তত এক বার বেরিয়ে পরুন। ট্রাভেল ব্যাগ রেডি রাখবেন সবসময়। 😊



নিজের মনকে জানতে




অপরিচিত কারোর সঙ্গে কথা বলতে ভয় পাই। নতুন কোনো পরিবেশে সহজ হতে পারি না। লজ্জা, দ্বিধা , ভয় একত্রে আমাকে গ্রাস করে। আত্মবিশ্বাসের অভাব বোধ করি। এমন কেনো হয়? পরিত্রাণের উপায় কি?




এই সমস্যা শুধু আপনার একার নয়। আমাদের সমাজের প্রায় দশ শতাংশ মানুষ সামাজিক ভীতি বা সোশ্যাল ফোবিয়া র শিকার। যারা নানা ক্ষেত্রে যোগ্য হওয়া সত্বেও, শুধু মাত্র নিজেকে গুটিয়ে রাখার কারণে সমাজে স্বীকৃতি পায় না। জীবণের নানা ক্ষেত্রে রিজেকশণের শিকার হয়। এর কারন অল্প কিছু ক্ষেত্রে হতে পারে জেনেটিক বা বংশগত। অর্থাৎ নিকটাত্মীদের মধ্যে যদি সোশ্যাল ফোবিয়া থাকে, তবে তা আপনার ব্যক্তিত্বের মধ্যেও এসে পড়তে পারে। তাছাড়া শৈশবে ঘটে যাওয়া কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা বা কোনো প্রকার শারীরিক ও মানসিক শোষণ পরবর্তী কালে সোশ্যাল এঞ্জাইটি র জন্ম দিতে পারে। টানা অনেক টা সময় এইভাবে চলতে থাকলে একসময় আত্মবিশ্বাস কমতে শুরু করে এবং শেষ পর্যন্ত তাদের  ডিপ্রেশনে  তলিযে যাওয়ার সম্ভবনা প্রবল। তাই সঠিক সময়ে সমস্যার শনাক্তকরণ ও সেই অনুরূপ ব্যবস্থা নেওয়া জরুরী। অবহেলা না করে , সঠিক দিক নির্দেশ পেলে খুব সহজেই এই অবস্থা কাটিয়ে ওঠা যায়। আরও জানতে অবশ্যই পড়ুন 👇






যদি কেউ আগ বাড়িয়ে সামনে থেকে অপমান করে এবং যদি অপমানিত বোধ হয়, তাহলে করণীয় কী?


একটু সময় নিন, বোঝার চেষ্টা করুন আপনার দিক থেকে এমন কিছু ত্রুটি রয়েছে কি না যার জন্য তিনি আপনাকে অপমান করতে বাধ্য হলেন। সেই রকম কিছু থাকলে অনুতাপ করুন, নিজেকে শুধরে নিন, প্রয়োজনে ক্ষমা চেয়ে নিন। আর যদি তেমন কোনো কারণ খুঁজে না পান, জাস্ট হেসে উড়িয়ে দিন। কেননা যিনি অপমান করলেন তিনি তাহলে ইচ্ছাকৃত ভাবে আপনাকে আঘাত দেয়ার জন্যই অপমান করেছেন। আপনি যদি তার কথায় সত্যিই অপমানিত বোধ করেন, তাহলে তো তার উদ্দেশ্য সফল !! এই ক্ষেত্রে মনে কোনোরকম রাগ-বিদ্বেষ পুষে রাখার প্রয়োজন নেই। অপমানের বদলা নেয়া বা উপযুক্ত শাস্তি দেয়ার কথা কখনো মনেও আনবেন না, এতে আপনার মনে রাগ, হিংসার মতো নেগেটিভ ইমোশনস কে পুষে রাখতে হবে, যা আপনার মানসিক স্বাস্থের পক্ষে মোটেও উপকারী নয়। এগুলির পেছনে শুধু শুধু নিজের এনার্জি ও সময় নষ্ট করবেন না। নিজের ইমোশনস কে কনট্রোল করতে নিয়মিত মেডিটেশন প্র্যাকটিস করুন। ভবিষ্যতে ওই ব্যক্তির প্রতি অবশ্যই সতর্ক থাকুন, কিন্তু মনে মনে উনাকে ক্ষমা করে দেবেন।






মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Emotional Intelligence কী?

চাকরি হারানোর ভয় কি আপনাকে রাত দিন তাড়া করে বেড়াচ্ছে?

ডিপ্রেশন কে হালকা ভাবে নিয়ো না