নিজের মনকে জানতে -- পর্ব চার

শারীরিক ও মানসিক ভাবে আমি খুব দুর্বল। অল্পেতেই ঘাবড়ে যাই। কিভাবে নিজেকে সাহসী ও আত্মবিশ্বাসী করে তুলবো?


ধন্যবাদ প্রশ্নটি করার জন্য। প্রথমে আসি শারীরিক দুর্বলতা র প্রসঙ্গে। শারীরিকভাবে আমরা কেউ ই কিন্তু খুব বেশী দুর্বল নই , আমাদের আসল দুর্বলতা থাকে মনে। সেটাই আমাদের ব্যক্তিত্বে প্রকাশ পায়। তারপরেও যদি মনে করেন যে আপনি অন্যদের তুলনায় শারীরিকভাবে কিছুটা দুর্বল, সেটা আপনি একটু চেষ্টা করলে খুব সহজেই কাটিয়ে উঠতে পারেন। আমাদের শরীর কে সুস্থ সবল রাখতে গেলে শরীরের সঠিক যত্ন নিতে হয় - এটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু আজকের এই ব্যাস্ত জীবনের অজুহাতে আমাদের অনেকের ই নিয়মিত শরীরচর্চায় প্রচন্ড অনীহা। এখানে কিছু সহজ টিপস শেয়ার করছি, যাতে আপনি দিনভর এক্টিভ ও এনার্জেটিক ফীল করেন, পাশাপাশি শরীরও সুস্থ থাকে।


নিজের মনকে জানতে - পর্ব চার



● বেসিক ডিসিপ্লিন : 

জীবন যাত্রায় কিছুটা ডিসিপ্লিন জরুরী। খাওয়া দাওয়া, ঘুম ও দৈনন্দিন কাজকর্মের জন্য সময় নির্দিষ্ট করুন। শরীর সুস্থ রাখতে শরীরচর্চার কোনো বিকল্প নেই। যদি নিয়মিতরূপে শরীর চর্চা না ও করতে পারেন, অবশ্যই শুয়ে-বসে দিন কাটাবেন না। দৈনন্দিন কাজ কর্মের মধ্যে এমন কাজগুলি করার চেষ্টা করুন যেগুলি করতে গেলে যথেষ্ট শারীরিক কসরত করতে হয়। মোদ্দা কথা শরীরকে চালাতে হবে। ফিজিক্যালি এক্টীভ থাকার চেষ্টা করবেন। স্পোর্টস এ ইন্টারেস্ট থাকলে খেলাধুলায় অংশ নিতে পারেন। 

● প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা :

রোজ কিছুটা সময় খোলা আকাশের নীচে প্রকৃতির কোলে কাটানোর চেষ্টা করবেন। একা একা হাটতে যেতে পারেন। পরিস্কার জায়গা পেলে খালি পায়ে হাঁটতে পারেন। আর একটা কথা, প্রতিদিন অন্তত 15 - 20 মিনিট গায়ে সূর্যের আলো ( sunlight exposure ) লাগানোর চেষ্টা করবেন। 

● খাওয়া-দাওয়া : 

পরিমিত ও সুষম খাবার খবেন। শুধু মাত্র মাছ, মাংস , ডিম , দুধ খেলেই শরীর শক্তিশালী হয় না। লক্ষ্য রাখতে হবে খাবার যেন সুষম ( ব্যালান্সড ডায়েট ) ও সহজপাচ্য হয়। খাবার খেলে হজম ই যদি না হয়, তাহলে তো শরীরের কোনো কাজে লাগবে না। প্রাণিজ প্রোটিন ( মাছ, মাংস , ডিম ইত্যাদি ) দিনের বেলায় খেলে হজম হতে সুবিধা হয়। রাতের খাবার হবে হালকা এবং নিরামিষ। ঘুমাতে যাওয়ার অন্ততপক্ষে দুই ঘন্টা আগে ডিনার শেষ করবেন। প্রচুর পরিমাণে ফল মূল ও টাটকা শাক সব্জি খাবেন।প্রতিদিনের খাবারে তেল-মশলা ও নুন-চিনির ব্যবহার কম করুন। বাজারের পেকেটজাত ' রেডি টু ইট ' খাবার না খাওয়া ই ভালো। 

ফ্রিজের ঠান্ডা জল না খাওয়া ই ভালো। গরমে কোল্ড ড্রিঙ্কস এড়িয়ে চলুন, পরিবর্তে ঘরে বানানো লেবুর সরবত, ফ্রুট জুস, ঘোল বা ডাবের জল পান করুন। সারাদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করুন। শুধু মাত্র খাবার টেবিলে জল খাবেন না। খাবার খাওয়ার এক ঘন্টা আগে বা পরে জল খাবেন। খাবার দ্রুত হজম হবে। গ্যাস অম্বলের সমস্যা কম হবে। 

● পর্যাপ্ত ঘুম ও বিনোদন :

আপনি যতো ব্যাস্ত ই হোন না কেন প্রতিদিন অন্ততপক্ষে 6 থেকে 8 ঘন্টা ঘুম জরুরী। শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতার জন্য পরিমিত ঘুম অপরিহার্য । রাত 10 থেকে 2 টা এই সময় টা বায়োলজিক্যালি আমাদের ' ডিপ স্লিপ ' এর সময়। এই 4 ঘন্টা র ঘুমের উপকারিতা আপনি সারাদিন ঘুমালে ও পাবেন না। সুতরাং এই সময় টা কখনো মিস করবেন না। রাত জেগে পড়াশোনা বা অন্যান্য কাজ না করে, প্রয়োজনে মাঝ রাত্তিরে ঘুম থেকে উঠে করবেন।

কিছু টা সময় ব্যায় করবেন প্রতিদিন নিজের আনন্দ ও মনের খুশী র জন্য। পছন্দের কোনো হবি বা যে ধরণের কাজ আপনাকে আনন্দ ও মানসিক তৃপ্তি দেয় তা ই করবেন। সুযোগ পেলে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিন , সিনেমা দেখুন। 


ডিপ ব্রীদিং :

নানা গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে যে  ডিপ ব্রীদিং   বা গভীর ভাবে শ্বাস নেয়ার উপরিকারিতা অনেক। এটি শুধু স্ট্রেস বা এঞ্জাইটি নিয়ন্ত্রণ করে মন কে ই শান্ত করে না। আমাদের সামগ্রিক সুস্থতা ও ইম্যুনিটি র পক্ষেও লাভদায়ক। মাত্র দশ মিনিট প্রতিদিন ডিপ বৃদিং করুন।


নিজের মন কে কিভাবে শক্তিশালী করবো?

এই প্রশ্ন টি র উত্তর খুঁজতে গেলে আগে জানতে হবে আমাদের মন আসলে কি? সহজ করে বললে, পাঁচ ইন্দ্রিয় ( চোখ, কান , নাক , জিহ্বা ও ত্বক ) দিয়ে আমরা প্রতিনিয়ত পরিবেশ থেকে যেসব তথ্য গ্রহণ করি এবং পরিবেশের সাথে আদান প্রদান স্বরূপ আমাদের করা কাজ ( একশন ) সেই সব কিছুর মিলিত অভিজ্ঞতা , আমাদের ব্যক্তিগত অনুভূতি ও কল্পনার মিশেলে তৈরী হয় মন। বায়োলজিক্যালি জীবদেহে এর কোনো অস্তিত্ব না থাকলেও , এই মন ই কিন্তু আমাদের মূল চালিকাশক্তি।মনকে শক্তিশালী করতে গেলে, সচেতনভাবে মনের যত্ন নিতে হবে। 


মনের যত্ন নেয়ার সাত টি সেরা উপায় -


● জীবনে সত্য যতই বেদনাদায়ক হোক না কেন সত্য কে আশ্রয় করে থাকুন। নিজের প্রতি সৎ থাকুন। পারত পক্ষে মিথ্যে বলবেন না, না নিজের সাথে, না অন্যের সাথে। জীবনে কিছু পেতে ছল কপটের আশ্রয় নেবেন না।


● অন্যেরা কে কি বলছে / ভাবছে সেদিকে মনোযোগ না দিয়ে, নিজের লক্ষ্য ও কাজে ফোকাস করুন। শর্টকাট সাকসেস এর পেছনে না ছুটে পরিশ্রম করুন। কোনো একটা কাজে এতো বেশী ফোকাস করুন, যেন আপনি সেই কাজের একজন এক্সপার্ট হয়ে যান। আপনার চেয়ে ভালো ওই কাজটা যেন কেউ না করতে পারে। এতে আত্মবিশ্বাস বাড়বে। ব্যর্থতা আসবেই। ব্যর্থতার কারণ খূঁজে  সেই অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। 


● ভালো কোয়ালিটির বই পড়ুন। যেসব বই আপনাকে অনুপ্রাণিত করে, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সাহস জোগায়, সর্বোপরি জীবন সম্পর্কে পজিটিভ দৃষ্টি ভঙ্গী নিয়ে চলতে সাহায্য করে সেই সমস্ত বই বেছে নেবেন। আপনার পছন্দের কোনো মোটিভেশনাল স্পিকার থাকলে তাঁকেও নিয়মিত ফলো করতে পারেন। 


● ভালবাসা , করুণা ও ক্ষমা এই তিনটি মহৎ গুণ জীবনকে সহজ ও সফল করে তোলার জন্য অপরিহার্য, চেষ্টা করুন এদেরকে নিত্যদিনের চলার পথের পাথেয় করার। সহিষ্ণুতা প্র্যাক্টিস করুন। নিজের প্রত্যাশা কম করুন। 


● মনের শক্তি বাড়াতে এবং মনকে স্থিরীকৃত ও কেন্দ্রীভূত করার জন্য নিয়মিত  মেডিটেশন   ও প্রাণায়াম অভ্যাস করুন। মনের দুর্বলতার কারণে যদি কোনো কুঅভ্যাসে আসক্ত হয়ে গিয়ে থাকেন, সেই আসক্তি থেকে বেড়িয়ে আসতে ও মেডিটেশন আপনাকে সাহায্য করবে।


● মনের একাগ্রতা ও কনসেন্ট্রেশন পাওয়ার বাড়াতে বিভিন্ন মেন্টাল গেম খেলার চেষ্টা করুন যেমন চেস, সদুকু, মেন্টাল এরিথম্যাটিক ইত্যাদি বা নতুন কোনো ভাষা বা পছন্দের কোনো বাদ্যযন্ত্র শেখার চেষ্টা করুন। এতে আপনার 'মেন্টাল মাসল' তৈরী হবে। ব্রেনের ক্ষমতা বাড়বে। যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অনেক বেশী সচ্ছন্দ বোধ করবেন।


● যখন ই সুযোগ পাবেন, নিশ্বার্থ ভাবে অন্যের উপকারে লাগে এমন কোনো কাজ করুন। অন্যের আবেগ বোঝার চেষ্টা করবেন। নিজের  ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স  কিভাবে  বাড়ানো যায় সেদিকে ফোকাস করুন।


পরিশেষে এটুকুই বলবো মানুষ চাইলে পারে না এমন কোনো কাজ নেই। কোনো পরিস্থিতি বা চ্যালেঞ্জ আপনার ক্ষমতা থেকে বড়ো নয়। প্রতিরাতে শুতে যাওয়া র  আগে উপরয়ালার কাছে মনে মনে কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুল করবেন না। আর নিজেকে বলবেন, " আমি পারবো "



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Emotional Intelligence কী?

চাকরি হারানোর ভয় কি আপনাকে রাত দিন তাড়া করে বেড়াচ্ছে?

ডিপ্রেশন কে হালকা ভাবে নিয়ো না