গ্রীস্মের প্রচন্ড তাপপ্রবাহ থেকে শরীরকে রক্ষা করার উপায়
গ্রীষ্মের প্রচন্ড তাপ কে প্রাকৃতিকভাবে পরাস্ত করার 7টি সবচেয়ে কার্যকর উপায়
● হাইড্রেটেড থাকুন:
গ্রীষ্মের তাপকে প্রাকৃতিকভাবে পরাজিত করার অন্যতম সেরা উপায় হল প্রচুর পরিমাণে জল পান করা। এটি আপনার শরীরকে ঠান্ডা এবং হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে। প্রতিদিন কমপক্ষে 8-10 গ্লাস জল পান করুন এবং অন্যান্য হাইড্রেটিং তরল যেমন তাজা জুস, নারকেলের জল, বাটারমিল্ক এবং লেবুজল ইত্যাদি প্রতিদিন অবশ্যই পান করুন।
● হালকা পোশাক পরুন:
হালকা ওজনের এবং ঢিলেঢালা পোশাক বেছে নিন । কটন , লিনেন বা রেয়নের মতো বাতাস চলাচল করতে পারে এমন কাপড় দিয়ে তৈরি পোষাক আপনাকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। গাঢ় রং হালকা শেডের চেয়ে বেশি তাপ শোষণ করে, তাই হালকা রঙের পোশাক পরার চেষ্টা করুন।
● সুযোগ পেলেই সাওয়ার নিন:
ঠান্ডা জলে স্নান আপনার শরীরের তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে এবং আপনাকে দিনভর সতেজ থাকতে সাহায্য করে। আপনি সারা দিন নিজেকে তরতাজা রাখতে ঠান্ডা জলে ভরা স্প্রে বোতল ( 2/1 ফোঁটা পিপার মিন্ট অয়েল মিশিয়ে নেবেন ) ব্যবহার করতে পারেন।
● হালকা এবং টাটকা খাবার খান:
ভারী, তৈলাক্ত বা মশলাদার খাবার খেলে তা আপনার শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপ বাড়িয়ে তুলতে পারে, যা আপনাকে গ্রীষ্মের গরমে আরও অস্বস্তি বোধ করাবে । পরিবর্তে, ফল, সালাদ, টকদই এবং স্মুদির মতো হালকা এবং তাজা খাবার বেছে নিন।
● পিক আওয়ারে ঘরের ভিতরে থাকুন:
দিনের সবচেয়ে উষ্ণতম সময়ে, সাধারণত সকাল 10 টা থেকে বিকাল 4 টা পর্যন্ত ভিতরে থাকার চেষ্টা করুন। আপনার যদি বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হয়, একটি টুপি পরুন এবং সরাসরি সূর্যের আলো থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য একটি ছাতা ব্যবহার করুন। রোদ চশমা অবশ্যই ব্যবহার করবেন।
● শীতলগুণকারী ভেষজ ও প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করুন:
অ্যালোভেরা, শসা, পুদিনা, চন্দন এবং গোলাপ জলের মতো প্রাকৃতিক শীতলতা প্রদানকারি উপাদান দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করুন। আপনি এই উপাদানগুলি ব্যবহার করে একটি কুলিং ফেস প্যাক তৈরি করতে পারেন এবং একটি প্রশান্তিদায়ক এবং সতেজ প্রভাবের জন্য এটি আপনার মুখ এবং ঘাড়ে প্রয়োগ করতে পারেন।
● আপনার পরিবেশ ঠাণ্ডা রাখুন:
সরাসরি সূর্যালোক আটকাতে পর্দা, খড়খড়ি বা শেড ব্যবহার করে আপনার ঘরকে ঠান্ডা রাখুন। আপনি শীতল বাতাস সঞ্চালনের জন্য ফ্যান বা এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহার করতে পারেন। খুব ঠান্ডা জল খবেন না।এমনকি ফ্রিজের ঠান্ডা জলের পরিবর্তে মাটির পাত্রে (ভিজে কাপড় জড়িয়ে রেখে) রাখা জল পান করুন। আপনার বাড়ির চারপাশে বড়ো গাছ অথবা জায়গা কম থাকলে ছোটো ছোটো গাছের চাড়া রোপণে পরিবেশ ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করতে পারে। এমনকি ঘরে ইনডোর প্ল্যান্ট রাখলে তা ঘরের আভ্যন্তরিন তাপ কমাতে সাহায্য করে।
গ্রীষ্মকালে যখন বাইরের তাপমাত্রা প্রতিদিন পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে , তখন এর কুফল আমাদের স্বাস্থের উপরেও পড়তে দেখা যায় । ঘুম কমে যাওয়া , হজমের সমস্যা, দেহে প্রদাহ জনিত ব্যথা বেদনা, শরীরের অভ্যন্তরীন তাপ বেড়ে যাওয়া , ক্ষিদে না পাওয়া, অনিদ্রা ও মেজাজ চিরচিরে থাকা ইত্যাদি নানা শারীরিক ও মানসিক উপসর্গ দেখা যায়। এইসব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে প্রতিদিন নিয়ম করে শীতলি প্রাণায়াম অভ্যাস করুন। দেহ মন কে শীতল ও তরতাজা রাখতে এই বিশেষ প্রাণায়াম টি অত্যন্ত লাভদায়ক ।
সতর্কতা :
যাদের লো ব্লাড প্রেসার , হাঁপানি ও পুরাতন কফের সমস্যা, অনেক দিন যাবত কোলাইটিস জাতীয় সমস্যায় ভুগছেন , তাঁরা শীতলি প্রাণায়াম শুরু করার আগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে আলোচনা করে শুরু করবেন।
কিছু মজাদার গ্রীষ্মকালীন বিনোদনের পরিকল্পনা :
🌻 একসাথে দুই-তিন দিনের ছুটি ম্যানেজ করতে পারলেই, পরিবার বা বন্ধুদের সাথে বেড়িয়ে পরুন কাছে পিঠে কোনো পাহাড়ে বা ঘন জঙ্গল / অভয়ারণ্যে। হীল স্টেশন বা সবুজে ঘেরা গভীর অরণ্যে রিফ্রেশ হওয়ার সুযোগ ছাড়বেন না।
🌻 আশে পাশে কোনো সুইমিং পুল বা ওয়াটার রিজর্ট থাকলে বাচ্চাদের কে সঙ্গে নিয়ে ছুটির দিনগুলিতে চলে যান সেখানে।
🌻আপনি যদি নীরবে চুপচাপ বসে থাকতে ভালোবাসেন। সুযোগ মতো চলে যান কোনো মিউজিয়ামে বা বড়ো কোনো লাইব্রেরিতে। এই গরমে এই দুটো জায়গা ই শীতল প্রশান্তি এনে দিতে পারে। রিলাক্স করতে বা অলস দুপুর কাটানোর জন্য একেবারে আদর্শ জায়গা।
🌻 তাছাড়া বাতানুকূল সিনেমা হলে বা শপিং মলে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়া, টুকিটাকি শপিং বা সিনেমা দেখা চলতেই পারে। গরমের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে আনন্দ করার আদর্শ জায়গা এগুলি।
🌻 বিকেলে পার্কে নিয়মিত ঘুরতে যেতে পারেন । সুযোগ পেলেই জুস, নারিকেলের জল, লেবু পুদিনা র সরবত গলায় ঢালুন। রয়েছে নানা রকমের আইসক্রিম। বোতলবন্দী কোল্ড ড্রিঙ্কস কম খবেন।
গরমের সেরা খাবার - পান্তা ভাত !
পান্তা ভাতে বাজিমাত
আম, জাম, তরমুজ , কাঁঠাল , জামরুল , আনারসের মতো রসালু ও সুস্বাদু ফলের ডালি নিয়ে হাজির হয় গ্রীষ্মকাল। প্রাণ ভরে আনন্দ করে খান। মজার ব্যাপার হলো, গরম কষ্টকর হলেও , তুলনামূলক ভাবে আমরা গরমকালে সুস্থ থাকি। রোগ শোক কম হয়। শীতকালের তুলনায় বিভিন্ন ভাইরাসের প্রকোপ ও কম থাকে এই সময়টায় । প্রচুর ঘাম হওয়াতে শরীরের ডিটক্সিফিকেশন ভালো হয়। ব্লাড প্রেসার কম থাকে। সুতরাং বিরক্তি নিয়ে নয়, গ্রীষ্ম কে স্বাগত জানান খুশী মনে। ভালো থাকবেন সবাই। 🙏
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন