পান্তা ভাতে বাজিমাত !

 

পান্তা ভাতের পুষ্টি গুণ ( পোষক উপাদান সমূহ ) :


রাতভর জলে ভিজিয়ে রাখা পান্তা ভাতের পুষ্টিগুন টাটকা রান্না করা ভাতের তুলনায় অনেক বেশী। গবেষণায় দেখা গেছে , যে রাতভর ভিজিয়ে রাখাতে ভাত হালকা গেঁজে যায় ( ফার্মেন্টেড হয় ) , এর ফলে এতে উপস্থিত বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেলস অধীক সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং এদের জৈব উপলব্ধতা  অনেক টা বেড়ে যায়। যেসব প্রয়োজনীয়   ভিটামিন ও মিনারেলস পান্তা ভাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায় সেগুলি হলো - 

 বি ভিটামিন: 

পান্তা ভাতে ফার্মেন্টেশন হয় বলে  বি ভিটামিনের মাত্রা বাড়াতে পারে, বিশেষ করে থায়ামিন (বি১), রিবোফ্লাভিন (বি২), নিয়াসিন (বি৩) এবং ফোলেট (বি৯)। এই ভিটামিনগুলি শক্তি বিপাক, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করা  এবং কোষের বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। 

খনিজ পদার্থ: 

পান্তা ভাতে  আয়রন, জিঙ্ক এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো খনিজগুলির পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায় । এই মিনারেলস গুলি ইম্যুউন ফাংশন, শক্তি বিপাক, স্নায়ুকে সতেজ রাখতে এবং হাড়ের স্বাস্থ্য সহ শরীরের অনেক কাজের জন্য  গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে । 

ফাইটিক অ্যাসিড: 

ফার্মেন্টেশনের ফলে পান্তা ভাত  ফাইটিক অ্যাসিডের মাত্রাও হ্রাস করতে পারে, এটি এমন একটি যৌগ যা আমাদের দেহে  আয়রন এবং জিঙ্কের মতো নির্দিষ্ট খনিজগুলির শোষণকে বাধা দেয় । ফাইটিক অ্যাসিডের মাত্রা হ্রাস করায়  শরীরে এই খনিজগুলির জৈব উপলভ্যতা বাড়াতে সাহায্য করে। 

জলে ভেজানো ভাত  এবং হালকা গাঁজন ভাতের  পুষ্টির মান বাড়াতে সহায়ক এবং এর হজমশক্তি উন্নত করতে পারে। যাইহোক, এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে ভিটামিন এবং খনিজগুলির সঠিক মাত্রা ও উপলব্ধতা নির্দিষ্ট ধরণের চালের উপর নির্ভর করে, সেইসাথে তা কতক্ষণ ভেজানো ছিলো সেই  সময়কালের উপর  নির্ভর করে তা  পরিবর্তিত হতে পারে।



ছবি - আনন্দ বাজার 



পান্তা ভাতের  স্বাস্থ্য উপকারিতা :


বিভিন্ন গবেষণায় বারবার এই তথ্য উঠে এসেছে যে বাসি পান্তা ভাতের পুষ্টি গুণ আজকালকার হাই প্রোফাইল ডায়েট থেকে কোনো অংশে কম নয়। 


দ্রুত হজম হয় : 

ফার্মেন্টেশনের ফলে  ভাতের জটিল কার্বোহাইড্রেটগুলিকে ভেঙে ফেলে, ফলে এটি সহজে হজম হয়  এবং পেট ফাঁপা  এবং গ্যাস হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস করে। 


বর্ধিত পুষ্টির প্রাপ্যতা : 

পান্তা ভাতে প্রাকৃতিক ভাবেই পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন বি এবং সি, আয়রন এবং জিঙ্কের মতো পুষ্টি উপাদানের উপস্থিতি ও এদের বর্দ্ধিত মাত্রায় জৈব উপলভ্যতা, এগুলিকে  শরীরের পক্ষে শোষণ ও ব্যবহার করা সহজ করে তোলে। 


গ্লাইসেমিক সূচক কম করে : 

পান্তা ভাত  গ্লাইসেমিক সূচক কমাতে পারে, যার মানে এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এবং ইনসুলিন রেজিস্টেন্স রোধ করে ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। 


অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো করে ( Gut Health) : 

স্বল্প মাত্রায় গেঁজে যাওয়া  ভাত অর্থাৎ পান্তা ভাত উপকারী প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ, যা আমাদের অন্ত্রের স্বাস্থ্য-বান্ধব  ব্যাকটেরিয়াকুলের সংখ্যা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ডায়রিয়ার মতো হজম সংক্রান্ত সমস্যাগুলির ঝুঁকি হ্রাস করে অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন  করে।

 

ইম্যুনিটি বাড়াতে সাহায্য করে : 

পান্তা ভাতে উপস্থিত প্রোবায়োটিকগুলি  শ্বেত রক্তকণিকা এবং অ্যান্টিবডিগুলির উৎপাদণ  বাড়িয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। 


সুনিদ্রা র সহায়ক :

কিছু গবেষণা প্রমাণ করেছে যে  ভেজানো ভাত ঘুমের সহায়ক কারণ হতে পারে। পান্তা ভাতে  গামা-অ্যামিনোবুটারিক অ্যাসিড (GABA) নামে এক ধরণের রাসায়নিক থাকে, যা একটি নিউরোট্রান্সমিটার। এটি  মস্তিষ্কের স্নায়ু কে  শান্ত রাখে  এবং রিলাক্স থাকতে সাহায্য করে। GABA নিউরাল উত্তেজনা হ্রাস করতে এবং ঘুমের আবেশ বৃদ্ধি করতে সুপরিচিত। সুতরাং, নিয়মিত পান্তা ভাত খাওয়া ঘুমের মান উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। 



তথ্যসূত্র :


হিন্দুস্তান টাইমস  

সায়েন্স ডিরেক্ট জার্নাল 



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ডিপ্রেশন কে হালকা ভাবে নিয়ো না

চাকরি হারানোর ভয় কি আপনাকে রাত দিন তাড়া করে বেড়াচ্ছে?

2023 এ সুস্থ থাকতে ও অতিমারী থেকে বাঁচতে আজই শিখে নাও ডিপ ব্রীদিং