জীবনকে অর্থবহ ও সফল করে তুলতে আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকা টা ভীষণ জরুরী। লক্ষ্যহীন জীবণ অনেকটা ঠিকানা বিহীন চিঠির মতো, কোথাও পৌছায় না। অথচ আশ্চর্যের বিষয় প্রায় পচানব্বই শতাংশ মানুষের জীবনে কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকে না। এই ব্যপারে আমরা অনেকেই কিছুটা গা ছাড়া স্বভাবের। তার ফলে বেশিরভাগ মানুষ জীবনে সফল হতে পারে না , তার মধ্যে কেউ কেউ যদিও বা পেশাগত জীবনে সাফল্য পেয়ে যায় , কিন্তু জীবনে সন্তুষ্টি থাকে না, সেই অর্থে অনেকেই তেমন সুখী সন্তুষ্ট নয় । একটা সময় পরে বাধ্য হয়ে নিজের সাথে সমঝোতা করে নেয়। ঐ ' চলে যাচ্ছে ' টাইপের জীবন কাটাতে থাকে। অনেকে আবার 'ভালো আছি' র অভিনয় করে চলে , আর যারা তা পারে না, তারা ধীরে ধীরে ডিপ্রেশনে তলিয়ে যায়, একসময় হারিয়েই যায় চিরতরে। উদয়াস্ত পরিশ্রম করে বস্তুগত প্রয়োজন টুকু হয়তো কোনো রকমে পুরণ হয়, কিন্তু সেই সঙ্গে থাকে চূড়ান্ত স্ট্রেস, অনিশ্চয়তা , মানসিক যন্ত্রণা , ভয় , ক্ষোভ আরও সব ' মন খারাপের আয়োজন '। এই ধরণের সফলতার মানে তবে কী ? কখনো কি ভেবে দেখেছো কেনো এমন হয়??
জীবনে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকা কেন জরুরী? Why proper goal setting is so important in life?
আগেই বলেছি লক্ষ্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে আমরা অনেকটা ই উদাসীন ও দিকভ্রান্ত। সাধারণত ভূল লক্ষ্য নির্বাচনের পেছনে থাকে পারিপার্শ্বিকতার প্রভাব ও নিজেদের অজ্ঞতা। জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ' লক্ষ্য নির্ধারণ ' যার জন্য অনেক ধৈর্য্য , মানসিক স্থিরতা ও রিসার্চ প্রয়োজণ, অনেকটা সময় ও ফোকাস ইনভেস্ট করতে হয়। আর আমরা কী করি? প্রথমেই যে ভুলটা করি সেটা হলো, "জীবনের লক্ষ্য" মানে পেশাগত সাফল্য কে ধরে নেই। আর সেটা করতে গিয়ে, যারা তথাকথিত ভাবে পেশাসফল , তাদেরকে অন্ধের মতো কপি করি। আর নয়তো , পরিবারের লোকজন, পরিচিত বা বন্ধু বান্ধবদের সাজেশন মেনে চলতে শুরু করি। কেননা, আমাদের তো নিজস্ব কোনো ভিশন নেই, না আছে কোনো এইম! সুতরাং, সবাই যা করছে , বা বলছে তাই করে চলি। এইরকমের দায়সারা মনোভাব ই পরবর্তী সময়ে জীবণ কে জটিল ও দুর্বিসহ করে তোলে।
জীবনে সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণ করবো কিভাবে? how to set proper goals in life?
আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষের জীবনে কোনো উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য থাকে না, আর যাদের থাকে তারাও লক্ষ্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক আবেগ ও পারিপার্শ্বিক প্রভাবে প্রভাবিত হয়। চলো এবার বোঝার চেষ্টা করি , লক্ষ্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে সঠিক পদ্ধতি কী? যাতে করে পেশাগত জীবনে সফলতার পাশাপাশি, সামগ্রিকভাবে আমরা জীবনে সুখ ,সন্তুষ্টি ও পরিপূর্ণতা পেতে পারি।
1. নিজেকে আবিষ্কার কর : Focus on self - Self discovery
সবচেয়ে প্রথমে যেটা করতে হবে , সেটা হল নিজেকে জানা। আমরা কখনো নিজের দিকে তাকাই না, ফোকাস সবসময় বাইরের দিকে থাকে। কে কী বলছে, কে কী করছে সেদিকেই তাকিয়ে থাকি। শুরুতে কিছুটা সময় শুধু নিজেকে অবজার্ভ কর। তুমি কি চাও? প্রতিটা মানুষ স্বতন্ত্র।কাজেই তাদের চাওয়া পাওয়া গুলিও ভিন্ন হয়। আত্ম-বিশ্লেষণ কর, বোঝার চেষ্টা কর - তোমার ব্যক্তিত্ব কেমন , জীবনে কোথায় পৌঁছাতে চাও, তোমার ইচ্ছেগুলি কি, নিজের দক্ষতা, ক্ষমতা, সহজাত প্রবণতা , এবং প্রায়োরিটি , তোমার দুর্বলতা গুলি কী ইত্যাদি।
2. নিজের কল্পনাশক্তি ব্যবহার কর : Use your imaginative mind
দ্বিতীয় ধাপে, তোমার কল্পনা শক্তি কে কাজে লাগাও। কল্পনা কর, আগামীতে কেমন জীবন চাইছো। পছন্দের পেশা বা ক্যারিয়ার । লাইফে কোন জিনিস গুলি (must haves) অবশ্যই থাকতে হবে। যতটুকু সম্ভব ডিটেলে কল্পনা করার চেষ্টা করবে। লাইফ এর প্রায়োরিটি গুলি কী । তোমার জীবনের আলটিমেট গোল কী হতে পারে সেটাও ভেবে ঠিক করে নাও।
3. কাগজে লিখে ফেল : Pen it down
নিজের জীবন নিয়ে যা কিছু কল্পনা করেছো সেগুলি একটা কাগজে লিখে ফেল। জীবনে যা কিছু পেতে চাইছো, করতে চাইছো বা এচিভ করতে চাইছো, তা কেনো চাও? এই 'কেনো' র উত্তর টা যেন নিজের কাছে যথেষ্ট স্পষ্ট ও কনভিন্সিং হয়। আর একটা কথা, তোমার প্রত্যাশা গুলি যেন অবশ্যই রিয়েলিস্টিক হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
4. প্রত্যাশা গুলিকে আরও স্পেসিফিক ও স্মার্ট বানাও : Make your expectations smart and real
এবার ইচ্ছে গুলিকে আরও স্পেসিফিক্যালি লিখতে শুরু কর। কল্পনায় সমগ্র জীবনের যে প্রতিচ্ছবি এঁকেছো এবার সেটাকে পয়েন্ট এ ভাগ করে লিখতে হবে।
● শিক্ষা ও স্কিল ডেভেলপমেন্ট
● স্বাস্থ্য
● পেশা বা ক্যারিয়ার
● সম্পদ
● পরিবার ও ব্যক্তিগত সম্পর্ক
● সামাজিক অবস্থান
● তোমার প্যাশন / হবি বা এমন কিছু যা তোমাকে আনন্দ দেয়।
পয়েন্ট অনুযায়ী মনের ইচ্ছা গুলি লিখবে। এই সাতটি পয়েন্ট মিলেই তোমার গোটা জীবন তৈরী হবে। এর বাইরে কিছু থাকলে সেটাও এড করতে পারো।
5. পর্যাপ্ত রিসার্চ সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে : Adequate research leads to better decision
4 নম্বর প্যারা তে তুমি ভবিষ্যত জীবনের যে প্রতিচ্ছবি তৈরী করেছো ( wish list ) সেটাকে পুরণ করতে সঠিক এডুকেশন ও উপযুক্ত ক্যারিয়ার নির্বাচন অত্যন্ত জরুরী। এখানেই প্রয়োজন রিসার্চ ও সঠিক পরিকল্পনা। খুঁজে দেখতে হবে যে, তোমার বাস্তবিক অবস্থান ( 1 নং প্যারা ) অনুযায়ী কী ধরণের ক্যারিয়ার ও এডুকেশন তোমার ইচ্ছেগুলোকে ( 4 নং প্যারা ) অর্জন করতে সবচেয়ে বেশী কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারে। তোমার নির্বাচিত ক্যারিয়ার বা পেশা অর্জন করতে যে ধরণের এডুকেশন বা স্কিল প্রয়োজণ, সেদিকে ফোকাস করে এগুতে হবে।
6. লক্ষ্য অর্জনের সময় নির্দিষ্ট কর : Set specific time period for each goal
স্বপ্ন বা ইচ্ছেগুলোকে অর্জন করার জন্য উপযুক্ত পরিকল্পনা এবং নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ জরুরী। যেমন -" আমি আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এই কাজ টা করতে চাই/ বা পেতে চাই।" সেই সাথে প্রতিটা লক্ষ্য অর্জনের জন্য থাকতে হবে সঠিক ও বাস্তব সম্মত পরিকল্পনা। এখানে কল্পনা নয়, কাজে লাগাও তোমার লজিক্যাল মাইন্ডকে।
7. বিকল্প রাস্তা খোলা রাখো : Get your plan B ready
ক্যারিয়ার নির্বাচনের ক্ষেত্রে সবসময় সেকেন্ড অপশন বা বিকল্প পথ ভেবে রাখতে হয়। কোনো কারণ বশত যদি তোমার পছন্দের ক্যারিয়ারে সফল না হতে পারো, সেক্ষেত্রে সেকেন্ড অপশন খোলা থাকবে। এতে মানসিক চাপ অনেকটা কম থাকে।
8. প্যাশন কে আঁকড়ে থাকো : Follow your passion
জীবনের উত্থান পতনের মাঝেও চেষ্টা করবে নিজের প্যাশন কে ধরে রাখতে। যে কাজ করে তুমি আনন্দ পাও, যা তোমাকে মানসিক শক্তি জোগায় , সেটিকে কোনো কিছুর অজুহাতেই ছেড়ে দেবে না। প্যাশন মনের খোরাক। এটাকে প্রফেশন বানানোর প্রয়োজণ নেই। কেউ কেউ এতে সফল হলেও, ব্যর্থতা র সংখ্যা টা অনেক বেশী।
পরিশেষে একটা কথা মনে রাখতে হবে যে ,সফলতার মানে শুধু একটা পছন্দসই চাকুরি বা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা নয় , না শুধু ব্যাংক ব্যালান্স , বাড়ী গাড়ির মালিক হওয়া । সফলতার মানে অনেক বিস্তৃত , সামগ্রিক ভাবে ব্যাক্তি জীবনের উন্নয়ন। অর্থাৎ এখানে উল্লেখিত প্রতিটা পয়েন্টে ( শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্যারিয়ার, পরিবার বা সম্পর্ক, সম্পদ বা অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক অবস্থান, প্যাশন ) হতে হবে ' অল ইন্ক্লুসিভ গ্রোথ ', তাহলেই তুমি সফল।
"Setting goals is the first step in turning the invisible into the visible "
- Tony Robbins
চমৎকার লিখেছেন।বর্তমানে জীবনের লক্ষ নির্ধারন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 👌👌🌹🌹
উত্তরমুছুন