কল্পনাশক্তি ও সৃজনশীলতা

 পৃথিবীর ইতিহাসে মানুষ যে  আজকে  সর্বশ্রেষ্ঠ জীবের  শিরোপা অর্জন করেছে , তা কিন্তু তার বিদ্যা , বুদ্ধি , মেধা বা পেশী শক্তির জন্য আসেনি, এসেছে তার কল্পনাশক্তি ও সৃজনশীলতা র জন্য। প্রখর কল্পনা শক্তি ও সৃজনশীল মন যেকোনো অসাধ্য কে ই সম্ভব করে তোলে।  এখানে আমরা বোঝার চেষ্টা করবো কল্পনা শক্তি কি? কী উপায়ে কল্পনা শক্তি বাড়ানো যায়?


কল্পনা শক্তি বাড়ানোর উপায়।

 imagination বা কল্পনা কে বুঝতে গেলে আগে জানতে হবে শব্দ বা words এর গুরুত্ব। একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারবে, আমাদের মেমোরি তে যতো রকমের ইনফরমেশন স্টোরড আছে , তা আছে নির্দিষ্ট কোনো  শব্দ বা শব্দ গুচ্ছ ( phrases ) রূপে। প্রতি টা শব্দ কোনো বিশেষ অভিজ্ঞতা , তথ্য বা ধারনা , আবেগ ও অনুভূতি কে প্রকাশ করে। যা কিছুকে  শব্দে প্রকাশ করা যায় না , সেগুলিকে কখনো কল্পনা করা সম্ভব নয় । 

কল্পনা শক্তি কী?

কল্পনা বা ইমাজিনেশন হল মনের এমন এক বিশেষ ক্ষমতা যেখানে ব্যক্তি তার নিজস্ব খেয়াল খুশী মতো নির্বাচিত  কিছু শব্দ বা শব্দ গুচ্ছ নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিচ্ছবি তৈরী করে। সহজ করে বললে , অনেকটা ' নিজের সাথে নিজেই গল্প বলা 'র মতো । বাস্তবে এই কাল্পনিক প্রতিচ্ছবি বা গল্পের কোনো অস্তিত্ব না থাকলেও, তা নিজের কাছে  রূপে , রসে, বর্ণে, গন্ধে এতটাই জীবন্ত হয়ে ওঠে , যে  , নিজের মস্তিস্কও ( logical mind ) অনেক সময় কনফিউজ্ড হয়ে একে ' বাস্তব অভিজ্ঞতা ' বলে মেনে নেয়। ( উদাহরণ - auto suggestion / positive self affirmation ইত্যাদি)। 

যাদের মন সবসময়  কৌতূহলী এবং যারা  ' বাস্তবতা ' কে মেনে না নিয়ে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দাঁড়ায় , তারাই নিজের আত্মবিশ্বাস ও মনের কল্পনা শক্তি কে কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন সম্ভাবনার  উদ্ভাবন করে। লক্ষ্য করলেই দেখতে পারবে , science , arts , philosophy র কোনো concept  বা অন্য যেকোনো সৃজনশীল কাজ / নতুন কিছু উদ্ভাবনের মূলে রয়েছে কল্পনা শক্তি ও সৃজনশীলতা । আপাতভাবে  যা কিছু  অসম্ভব ( limitation) তাকে মেনে না নেয়ার মানসিকতা ই , আমাদের কল্পনা ও সৃজনশীলতা কে আরও বেশী  শক্তিশালী করে। হার না মানা , ছাপিয়ে যাওয়া র এই মানসিকতাই ইতিহাস তৈরী করে। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করতেই হয় নেপোলিয়নের সেই বিখ্যাত উক্তি - 

" Imagination rules the World "

যখন পজিটিভ মাইন্ডসেট নিয়ে, নিজের  কল্পনা কে আশ্রয় করে  আমরা সৃষ্টিশীল , গঠন মূলক কোনো কাজ করি সেটাই সৃজনশীলতা । অন্যভাবে বললে, কল্পনা কে বাস্তবে রূপান্তরিত করার জন্য আমরা যে নিরবিচ্ছিন্ন  প্রয়াস করি তাকেই সৃজনশীলতা বা creativity বলে। যেকোনো innovative ভাবনার পেছনে রয়েছে imaginative ও creative মাইন্ড। অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে কল্পনা শক্তি কি genetic? আমাদের সবার মধ্যেই মনের এই বিশেষ গুণ টি রয়েছে। কারোর ক্ষেত্রে হয়তোবা একটু বেশী । গবেষণায় দেখা গেছে 20 থেকে 22% ক্ষেত্রে এই গুণটি genetic বাকী সবটা ই অর্জিত। অর্থাৎ সঠিক প্রয়াসে এই গুণটি র বিকাশ সম্ভব।

কী  উপায়ে কল্পনা শক্তিকে  বাড়ানো যায়? ( steps to improve imagination and creativity) কল্পনা শক্তি বাড়ানোর উপায় :

● পড়ার অভ্যাস তৈরী কর :

যা কিছু পড়তে ভালো লাগে পড়ো। গল্প , উপন্যাস , নাটক , নভেল , ভ্রমণ কাহিনী সব ই পড়তে পারো। এইসব কিছুই কল্পনা শক্তির ইন্ধন জোগায় । টিভি বা মুভি তে সেই সুযোগ কম। কেননা এখানে অডিয়ো- ভিজুয়ালি সব টা প্রেজেন্ট করা হয় , সুতরাং কল্পনা করার তেমন কিছু নেই। 

ক্রিয়েটিভ মানুষের সাথে সময় কাটাও :

কৌতূহলী হও, প্রশ্ন করো।  ক্রিয়েটিভ মানুষ দের অবজারভ করো, তাদের সাথে গল্প করো। তাঁদের কথা শোনো। তাঁদের সাথে বিভিন্ন আইডিয়া শেয়ার কর।

দৌড়ানো নয় , নিয়ম করে হাটো :

গবেষকদের মতে নিয়মিত হাঁটা বাড়াতে পারে ক্রিয়েটিভিটি । Stanford university র একদল গবেষক তাদের করা এক গবেষণায় এই ব্যপারে উল্লেখ করেছেন । তাঁদের মতে , যারা খোলা আকাশের নীচে নিয়মিত হাঁটেন তাদের মস্তিস্কের সৃজনশীলতা ও কল্পনা শক্তির বিকাশ ঘটে  প্রায় 60 % এর কাছাকাছি  !!

গল্প বলার অভ্যাস কর :

সুযোগ পেলেই গল্প বলা অভ্যাস করো। বাড়িতে বা প্রতিবেশীদের ছোটো শিশুদের সাথে সময় কাটাও। তাদের সাথে গল্প কর। তাদের কথা শোনো। বাচ্চারা সবাই গল্প শুনতে ভালোবাসে। সুযোগ পেলেই ছোটদেরকে গল্প শোনাও। গুছিয়ে গল্প বলা টা একটা ক্রিয়েটিভ আর্ট। প্র্যাকটিসে ধীরে ধীরে মস্তিস্কের ক্রিয়েটিভ মাসল ডেভেলপ করবে।

● মেডিটেশন ও মাইন্ডফুলনেস প্র্যাকটিস কর :

হ্যা ঠিক ই শুনেছো। নিয়মিত ধ্যান বা মেডিটেশন   মনের অনাবশ্যক ভাবনা গুলিকে কাটিয়ে মনকে শুধু শান্ত ই করেনা, আমাদের ক্রিয়েটিভ মাইন্ড কেও  এক্টিভেট করে। 



●  ট্রাভেল ব্যাগ গুছিয়ে নাও :

সুযোগ পেলেই ব্যাগ কাঁধে বেড়িয়ে পর। প্রকৃতির কোলে নিজেকে হারিয়ে ফেলার মজা ই আলাদা। নতুন নতুন জায়গায় যাওয়া , নতুন মানুষের সাথে মেশা , ভিন্ন জীবন শৈলী , ভিন্ন সংস্কৃতি কে এক্সপেরিয়েন্স করা মনের প্রসারতা বাড়ায় , কল্পনা শক্তির বিকাশ ঘটে ।

নিজের  পছন্দের  হবি খুঁজে নাও : 

হতে পারে সে গান , নাচ , আবৃত্তি , ছবি আঁকা ,  বার্ড ওয়াচিং , গার্ডেনিং বা অন্য কিছু। কোনো হবি যদি না ও থাকে , নতুন করে শুরু করতে পারো । হবি যেকোনো সময় ডেভেলপ করা যায় । নিয়মিত কিছু টা সময় এইদিকে attention দাও , দেখবে ধীরে ধীরে আগ্রহ বাড়বে। 

Learning aptitude :

নতুন কিছু শিখতে থাকো। নতুন নতুন বিষয় সম্পর্কে জানতে চেষ্টা কর। যেকোনো নতুন অভ্যাস brain কে চ্যালেঞ্জ জানায়, ধীরে ধীরে উদ্ভাবনী ক্ষমতা বাড়বে। চারপাশের সবকিছু মনোযোগ সহকারে অবজারভ কর, অনেক নতুন কিছু শিখতে পারবে ।

মস্তিস্কের কর্মক্ষমতা বাড়ানোর ব্যায়াম :

চেস , soduku , ওয়ার্ড পাজল এর মতো খেলা , নতুন কোনো বাদ্যযন্ত্র বা ভাষা শেখা মস্তিস্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। এগুলির নিয়মিত অভ্যাসে attention span বাড়ে, মন একাগ্র হয়। পরোক্ষ ভাবে এরা imagination ও creativity বাড়াতে সহায়তা করে।

নিয়মিত ও পর্যাপ্ত ঘুম :

ভালো ঘুমের কোনো বিকল্প নেই। ভালো ঘুম শুধু স্নায়ুতন্ত্র কে সতেজ ও সজাগ করে না, creativty বাড়াতেও সাহায্য করে। যেকোনো সৃজনশীল কাজে যখন ই  কোনো একটা point এ আটকে যাবে , সবকিছু বন্ধ করে একটা nap নিয়ে দেখতে পার। দারুণ ফল পাবে।


Imagination and creativity



অতিরিক্ত ও অপ্রয়োজনীয় 'মোবাইল ইউজ' , মেন্টাল রিজিডিটি - নতুন কিছু শিখতে বা ট্রাই করতে অনীহা এবং নিজেকে comfort জোনের ভেতরে আবদ্ধ রাখা, এই সব কিছুই কল্পনা শক্তির বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে। 






মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Emotional Intelligence কী?

2023 এ সুস্থ থাকতে ও অতিমারী থেকে বাঁচতে আজই শিখে নাও ডিপ ব্রীদিং

চাকরি হারানোর ভয় কি আপনাকে রাত দিন তাড়া করে বেড়াচ্ছে?