অনিদ্রা দূর করার সাতটি কার্যকরী উপায়
অনিয়মিত বা অপরিমিত ঘুম কেই অনিদ্রা বা Insomnia বলা হয়। এমন কেউ নেই যে জীবনে একবার ও এই সমস্যার সম্মুখীন হন নি। অনেকে এতে দীর্ঘদিন কষ্ট পান। এটা ক্রনিক আকার ধারণ করে। তখন এই অপর্যাপ্ত বা অপরিমিত ঘুমের কারণে দেখা দেয় নানা শারীরিক ও মানসিক সমস্যা। সঠিক স্বাস্থ্য রক্ষায় পর্যাপ্ত ঘুমের বিকল্প নেই। আজ আলোচনা করবো Insomnia বা অনিদ্রা কেন হয়? এবং অনিদ্রা দূর করার প্রাকৃতিক উপায় কি সেবিষয়ে । খুঁজে দেখবো এর স্থায়ী সমাধান কী হতে পারে ।
রাতে ঘুম না আসার কারণ:
ঘুম কমে যাওয়ার বা একেবারেই ঘুম না হওয়ার নানা কারন থাকতে পারে, ব্যক্তি বিশেষে কারন গুলিও ভিন্ন হয়। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক ঠিক কোন কোন কারণে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে --
মানসিক দুশ্চিন্তা , উৎকণ্ঠা বা অন্য কোনো ক্রণিক স্ট্রেস এগুলির জন্য ঘুম কমে যেতে পারে। ক্রনিক ডিপ্রেসন এ আক্রান্ত ব্যক্তি অনিদ্রা বা Insomnia র শিকার হয় সহজেই।
মেডিক্যাল ইস্যু :
COPD , হার্টের অসুখ , আর্থ্রাইটিস বা অন্য কোনো ক্রনিক পেইন, থাইরয়েড এর সমস্যা বা অন্য কোনো শারীরিক সমস্যার জন্য।
অলস জীবন যাপন :
লক্ষ্যহীন জীবণ, আলস্য ও কর্ম বিমুখতা অনিদ্রা র কারণ হতে পারে ।
ভুল খাদ্যাভ্যাস :
অনিয়মিত ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ। এতে হজম শক্তির ব্যাঘাত ঘটে, দেহের ওজন ও বেড়ে যায় । খাবার সঠিক ভাবে হজম না হওয়া এবং ওজন বেড়ে যাওয়া বা স্থূলত্ব দুই ই পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের অন্তরায়।
কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া :
নির্দিষ্ট কিছু অশুধের প্রভাবে ও ঘুম কমে যেতে পারে । সেরকম কিছু সন্দেহ হলে অবশ্যই তোমার চিকিৎসকের সাথে কথা বলো।
নেশা দ্রব্যে আসক্তি :
অতিরিক্ত পরিমাণ চা , কফি খাওয়ার অভ্যাস। নিকোটিন ও alcohol এর মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার, রিক্রিয়েশনাল ড্রাগ । এগুলি অনিদ্রা বা insomnia র অন্যতম কারন।
পারিপার্শ্বিক কারন :
কিছু পারিপার্শ্বিক কারণেও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। যেমন বাড়িতে কোনো অসুস্থ রোগী বা বাচ্চা থাকলে, ' জেট লেগ ', বেডরুমের পরিবেশ ইত্যাদি ও ঘুমের উপর প্রভাব ফেলে।
☆ সিত্জোফ্রেনিয়া ও বাই পোলার ডিসঅর্ডার এর মতো জটিল রোগে ও ঘুম কমে যাওয়া বা অনিদ্রা হতে পারে।
আমি যদি কোনো কারণে অনিদ্রা বা insomnia য় ভুগি তাহলে কি আমাকে ঘুমের ওষুধ খেতে হবে?তাহলে, অনিদ্রা থেকে মুক্তির উপায় কী?? ভালো খবর এটাই সবাইকে অশুধ খেয়ে insomnia কে কন্ট্রোল করতে হয় না। ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমানো কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। জীবণশৈলীতে কিছু পরিবর্তন ও সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে এই সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।
অনিদ্রা দূর করার কার্যকরী উপায় ( প্রতিকার ) :
🔷️ শরীর চর্চা :
নিয়মিত শরীরচর্চার কোনো বিকল্প নেই। নিয়মিত শরীরচর্চা করলে দেহে রক্ত প্রবাহ বাড়ে, মাসল গুলি রিলাক্স হয়, স্নায়ু শান্ত থাকে , ডোপামিন হরমোনের মাত্রা বাড়ায় , যা দেহ-মনে প্রশান্তি এনে দেয়। অন্ততপক্ষে রোজ 30 মিনিট ব্যায়াম জরুরী। জিম এই যেতে হবে তার কোনো মানে নেই। দৌড়ানো , জোড়ে হাঁটা , সাতার কাটা বা যেকোনো রকমের আউটডোর গেমস চলতে পারে যেখানে শারীরিক কসরত জরুরী। এক্টিভ থাকতে হবে। নিজেকে ব্যাস্ত রাখো পছন্দের কাজে।
🔷️ ডিহাইড্রেশন থেকে বাঁচুন :
ডিহাইড্রেশনের হাত থেকে বাঁচতে প্রচুর জল খেতে হবে। পর্যাপ্ত জলপান ডিটক্সিফিকেশন এ সাহায্য করে ও ঘুমের সহায়ক।
🔷️ ঘুমের রুটিন মেনে চলুন :
🔷️ বেডরুমের পরিবেশ :
🔷️ ঘুমে ব্যাঘাত সৃস্টিকারী পদার্থ নিয়ন্ত্রণ করুন :
🔷️ মনের সঠিক যত্ন নিন :
● আয়ুর্বেদিক পঞ্চকর্মা , নস্য , শিরোধারা, অভ্যয়াঙ্গম ইত্যাদি অনিদ্রা দূর করতে বিশেষ কার্যকরী।
কী ধরণের খাবার খেলে অনিদ্রা দূর হয়?
ভালো ঘুমের জন্য সেরা ৫টি খাবার -
● টার্ট চেরি জুস:
টার্ট চেরি জুসে মেলাটোনিনের প্রাকৃতিক উত্স রয়েছে, একটি হরমোন যা ঘুম-জাগানোর চক্র নিয়ন্ত্রণ করে। শোবার আগে টার্ট চেরি জুস পান ঘুমের গুণমান এবং সময়কাল উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।
● কিউই (Kiwi) :
কিউই আরেকটি খাবার যাতে সেরোটোনিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের প্রাকৃতিক উত্স রয়েছে যা ঘুমের উন্নতিতে সাহায্য করতে পারে। শোবার আগে কিউই খাওয়া ঘুমের সূত্রপাত এবং সময়কাল উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।
● বাদাম :
বাদাম ম্যাগনেসিয়ামের একটি ভাল উৎস, যা পেশী শিথিলকরণ এবং ঘুমের গুণমান উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। ঘুমানোর আগে এক মুঠো বাদাম খেলে ঘুম ভালো হতে পারে।
● চর্বিযুক্ত মাছ :
চর্বিযুক্ত মাছ যেমন স্যামন, টুনা এবং ম্যাকেরেল ওমেগা -3 ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ, যা ঘুমের গুণমান উন্নত করার সাথে যুক্ত। সপ্তাহে কয়েকবার চর্বিযুক্ত মাছ খাওয়া ঘুমের উন্নতিতে সাহায্য করতে পারে। ওমেগা 3 আপনি ভেষজ উৎস থেকেও পেতে পারেন। রোজের খাবারে চিয়া সীড , আমন্ডস , সয় ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করুন।
● কলা :
কলা ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাসিয়ামের একটি ভাল উৎস, যা পেশী শিথিলকরণ এবং ঘুমের মান উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। শোবার আগে একটি কলা খেলে ঘুম ভালো হতে পারে।
উপরে দেয়া খাবারের তালিকা দেখে যদি আপনি কিঞ্চিৎ হতাশ হয়ে পড়েন , মনে হতেই পারে অধিকাংশই ব্যায় বহুল ও সাহেবি খাবার, তবে আপনার জন্য রইলো একটি সুস্বাদু , পুষ্টিকর ও দেশীয় খাবার - পান্তা ভাত!!
হ্যা, আপনি ঠিকই শুনেছেন, এই আপাত সাধারণ খাবার টি অসাধারণ পুষ্টি গুণে ভরপূর। বেশী ঠান্ডার সময় টুকু বাদ দিলে বছরভর অনায়াসেই খেতে পারেন। এটি আপনার হজম শক্তি বাড়ায়, রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, স্নায়ুকে শীতল রাখে, ইম্যুনিটি বাড়াতে সাহায্য করে এবং ভালো ঘুমের সহায়ক হতে পারে। পান্তা ভাত খেতে পারেন যেকোনো উপায়েই, কিন্তু যদি সুনিদ্রার কথাটি মাথায় রাখেন, তবে কার্যকরী ফল পেতে কলা ও আখের গুড় সহযোগে খাবেন। পান্তা ভাতের পুষ্টিকর গুণাবলি সম্পর্কে জানতে পড়ুন 👇
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন