নিজের মনকে জানতে -- পর্ব সাত

 স্মৃতিশক্তি বাড়াতে ৭টি সবচেয়ে কার্যকরী কৌশল 



নতুন কোনো বিষয় শিখতে বা জানতে অধ্যয়ন জরুরী । আর তার চেয়েও বেশী গুরুত্বপূর্ণ হলো সেই শেখা জিনিস কে মনে রাখতে পারা। অনেকেই আছে যারা যথেষ্ট পরিশ্রম করা সত্বেও পড়া বা জানা বিষয় বস্তু মনে রাখতে পারে না। কিছু সহজ ও কার্যকরী ট্যাকনিক আছে যেগুলি রপ্ত করলে মনে রাখা টা অনেক সহজ হয়ে যায়।


স্মৃতিশক্তি বাড়াতে এখানে  সাত টি কার্যকরী কৌশল রয়েছে আপনাদের জন্য -


পুনরাবৃত্তি: 


পুনরাবৃত্তি স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। যে কোনো নতুন তথ্যের পুনরাবৃত্তি আপনার মনের গভীরতর প্রদেশে (Subconscious mind) এটিকে প্রেরণ করতে ও স্থায়ীভাবে স্মৃতি হিসেবে জমা করতে পারে। এবং অর্জিত তথ্য কে আপনার স্বল্প-মেয়াদী স্মৃতি (short term memory)  থেকে  দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতিতে (long term memory) স্থানান্তরিত করতে সহায়তা করে। অর্থাৎ কোনো কিছু মনে রাখা টা তখন সহজ ও স্বতঃস্ফূর্ত হয়।


স্মৃতি সহায়ক ব্যবস্থা  (Mnemonics) : 


স্মৃতির সহায়ক ব্যবস্থা বা প্রণালী  এমন এক সহায়ক প্রণালী যা আপনাকে তথ্য মনে রাখতে সাহায্য করে অন্য কিছুর সাথে সংযুক্ত করে। এটি একটি ছড়া, আদ্যক্ষর বা ভিজ্যুয়াল ইমেজ হতে পারে যা তথ্যটিকে আরও স্মরণীয় করে তোলে। 


চাঙ্কিং বা খণ্ডিতকরণ : 


চঙ্কিং হল তথ্যকে ছোট, আরও পরিচালনাযোগ্য খণ্ডে বিভক্ত করার প্রক্রিয়া। এটি করার মাধ্যমে, আপনি কম সময়ে আরও তথ্য মনে রাখতে পারেন। 


ভিজ্যুয়ালাইজেশন (দৃশ্যগত কল্পনা) : 


ভিজ্যুয়ালাইজেশন এমন একটি কৌশল যেখানে আপনি তথ্য মনে রাখতে সাহায্য করার জন্য একটি মানসিক চিত্র তৈরি করেন। উদাহরণ স্বরূপ, আপনি যদি মুদিখানার একটি তালিকা মনে রাখার চেষ্টা করছেন, তাহলে আপনি নিজেকে পরিচিত মুদি দোকানের মধ্য দিয়ে হাঁটছেন কল্পনা করুন, দুপাশের রেক এ থরে থরে সাজানো জিনিস থেকে  আপনার তালিকার প্রতিটি আইটেম নিজের জন্য বেছে বেছে নিচ্ছেন কল্পনা করুন। এইভাবে মনে মনে কোনো দৃশ্যপট কল্পনা করে নেওয়াই ভিজ্যুয়ুলাইজেশন । দেখবেন  মনে রাখা টা তখন অনেক সহজ হয়ে যাবে।


সক্রিয় শিক্ষা (Active Learning): 


সক্রিয় শিক্ষার মধ্যে আপনি যে তথ্য মনে রাখার চেষ্টা করছেন তার সাথে ক্রমাগত জড়িত থাকা বোঝায়। যেমন পড়া বিষয় বস্তুর  নোট নেওয়া, সিনিয়র কোনো দাদা দিদি সাথে উক্ত বিষয় নিয়ে ডিটেলে আলোচনা করা, প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা বা অন্য কারও সাথে তথ্য নিয়ে আলোচনা করা। উক্ত বিষয়ের উপরে সম্ভাব্য কি কি প্রশ্ন হতে পারে তা ভেবে দেখা ইত্যাদি বিভিন্ন স্ট্র্যাটেজি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।


 ঘুম: 


পর্যাপ্ত ঘুম স্মৃতিশক্তিকে সুবিন্যস্ত ও একত্রিত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঘুমের সময়, আপনার মস্তিষ্ক দিনের বেলা আপনার তৈরি করা স্মৃতিগুলিকে প্রক্রিয়াকরণ  করে এবং আরও গভীরভাবে মেমোরি তে স্থানান্তরিত করে। 


শরীরচর্চা :


বিভিন্ন গবেষণায় নিয়মিত ব্যায়াম স্মৃতিশক্তি এবং মস্তিস্কের সামগ্রিক কার্যকারিতা উন্নত করতে দেখা গেছে। ব্যায়াম মস্তিষ্কে রক্ত ​​​​প্রবাহ বাড়ায়, যা স্মৃতিশক্তি এবং মনোসংযোগের ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। 


নিজের মনকে জানতে, পর্ব- সাত



যে কোনো কাজে মনোযোগ বা ফোকাস ধরে রাখার  সবচেয়ে কার্যকর কৌশলসমূহ -



আধুনিক জীবণধারায় যে কোনো কাজে ফোকাস এবং একাগ্রতা বৃদ্ধি করতে পারা টা যথেষ্ট  চ্যালেঞ্জিং বিষয় হতে পারে, বিশেষ করে আজকের এই কোলাহলমুখর পৃথিবীতে যেখানে মন কে বিক্ষিপ্ত করার বিপুল আয়োজন মজুত রয়েছে।  এখানে আমরা এমন কিছু পরিক্ষিত ও  কার্যকরী কৌশল খোঁজা র চেষ্টা করবো যা আপনার মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করতে পারে -



মননশীলতার অনুশীলন করুন: 


মাইন্ডফুলনেস হল বর্তমান মুহুর্তে সচেতনভাবে উপস্থিত এবং সম্পূর্ণভাবে নিযুক্ত থাকার কৌশল অনুশীলন। মননশীলতা অনুশীলন করে, আপনি আপনার মনের বহুমুখীতা নিয়ন্ত্রণ করে মন কে কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে নিবদ্ধ রাখতে এবং আরও ভালোভাবে মনোনিবেশ করতে প্রশিক্ষণ দিতে পারেন। 


বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী বস্তু দূর করুন : 


সর্বপ্রথম আপনার প্রাণপ্রিয় ফোনটি কে বন্ধ করুন অথবা সাইলেন্ট মোডে নিজের কাছ থেকে দূরে কোথাও রাখুন , আপনার কম্পিউটারে অপ্রয়োজনীয় ট্যাব বন্ধ করুন এবং কাজ করার জন্য একটি শান্ত নিরিবিলি  জায়গা খুঁজে নিন। বাহ্যিক বিক্ষিপ্ততা কিছু টা হ্রাস করতে পারলে আপনাকে হাতের কাজটিতে ফোকাস করতে সুবিধা হবে। 


অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ গুলিকে গুছিয়ে নিন : 


আপনার কাজগুলিকে গুরুত্ব অনুযায়ী অগ্রাধিকার দিন এবং প্রথমে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ গুলির উপর ফোকাস করুন। এই ভাবে করণীয় কাজ গুলিকে গুরুত্ব অনুযায়ী বিন্যস্ত করলে  আপনার স্ট্রেস ও কনফিউশন কম হবে এবং প্রতিটি কাজে ফোকাস করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। 


বিরতি নিতে ভুলবেন না :


নিয়মিত বিরতি নেওয়া আপনাকে সতেজ থাকতে এবং মানসিক ক্লান্তি এড়াতে সহায়তা করতে পারে। আপনার মনকে বিশ্রাম দিতে প্রতি 30-45 মিনিটে একবার ছোট বিরতি নেওয়ার চেষ্টা করুন। 


পর্যাপ্ত ঘুম : 


মনোযোগ এবং একাগ্রতা মনো-স্নায়বিক ক্ষমতা বিকাশের জন্য ঘুম খুব ই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি রাতে 7-9 ঘন্টা ঘুমানোর লক্ষ্য রাখুন যাতে আপনি দিনে ভালভাবে সক্ষম এবং সজাগ থাকতে পারেন। 


ব্যায়াম: 


ব্যায়াম মস্তিস্কের  কার্যকারিতা উন্নত করতে এবং মস্তিষ্কে রক্ত ​​​​প্রবাহ বাড়াতে সাহায্য করতে পারে, যা আপনাকে মনোযোগ এবং সতর্ক থাকতে সাহায্য করতে পারে। 


গভীর শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম (ডিপ ব্রীদিং) অনুশীলন করুন: 


 গভীর ভাবে শ্বাস ক্রিয়া  আপনার  চাপ কমাতে এবং ফোকাস কে উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। আপনার মন কে স্বচ্ছ ও হালকা রাখতে এবং পুনরায় কাজে ফোকাস করতে সাহায্য করার জন্য কোনো  কাজ শুরু করার আগে বা বিরতির সময় কয়েকটি গভীর শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করুন। এই কৌশলগুলিকে আপনার দৈনন্দিন রুটিনে অন্তর্ভুক্ত করে,  আপনার ফোকাস এবং একাগ্রতা উন্নত করতে পারেন এবং আপনার কাজ এবং ব্যক্তিগত জীবনে আরও গঠনমূলক অবদান রাখতে ও কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করতে পারবেন।



কোন খেলা গুলি মনোযোগ ও একাগ্রতা বাড়াতে সাহায্য করে?




 অনেক গেমস আছে যেগুলি 'কনসেন্ট্রেশন পাওয়ার' বৃদ্ধি  করতে সাহায্য করতে পারে। এমন কিছু মজাদার গেমস এর নাম এখানে শেয়ার করছি যেগুলি শুধু মনোযোগ ও ফোকাস বাড়াতেই সাহায্য করে না সাথে মস্তিস্কের কর্মক্ষমতা ও বিশ্লেষণী  ক্ষমতারও বিকাশ ঘটায়। উদাহরণ স্বরূপ : 



সুডোকু: 


সুডোকু একটি জনপ্রিয় সংখ্যার ধাঁধা খেলা যা সমাধান করতে প্রচুর মনোযোগ এবং একাগ্রতা প্রয়োজন। 


দাবা: 


দাবা একটি কৌশলগত খেলা যার জন্য আপনাকে পরিকল্পনা করতে হবে এবং প্রতিপক্ষের সম্ভাব্য চাল আগেভাগে জরিপ করে নিতে হবে। সেই অনুযায়ী  সামনের দিকে চিন্তা করতে হবে। এটি আপনার মনসংযোগ এবং ফোকাস উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। 


ক্রসওয়ার্ড পাজল: 


ক্রসওয়ার্ড পাজলগুলির জন্য আপনাকে গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে এবং আপনার শব্দভান্ডারের দক্ষতা ব্যবহার করতে হবে। এগুলি সমাধান করতে থাকলে  আপনার বুদ্ধিমত্তা , মনোযোগ  এবং স্মৃতিশক্তি উন্নততর ও ধারালো হবে।


জিগ স পাজল: 


জিগস পাজলগুলি আপনাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য হাতে থাকা টাস্কে ফোকাস করার জন্য প্রয়োজণীয় ধৈর্য্য ও মনসংযোগের  সহায়তা করতে পারে। 


ভিডিও গেম: 


কিছু ভিডিও গেম, যেমন কৌশলগত খেলা  এবং ধাঁধা আছে এমন গেম, আপনার মনোযোগ, এলার্টনেস, বিশ্লেষন ক্ষমতা এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।


 সামগ্রিকভাবে, যে সমস্ত গেমেস খেলার  জন্য যথেষ্ট ফোকাস, পরিকল্পনা এবং বিশ্লেষনী ক্ষমতা ও উদ্ভাবনী  চিন্তা ভাবনার  প্রয়োজন, নিয়মিত সেই খেলাগুলি খেলুন, এগুলি  আপনার মনোযোগ ও একাগ্রতা শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়ক হতে পারে। 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ডিপ্রেশন কে হালকা ভাবে নিয়ো না

চাকরি হারানোর ভয় কি আপনাকে রাত দিন তাড়া করে বেড়াচ্ছে?

2023 এ সুস্থ থাকতে ও অতিমারী থেকে বাঁচতে আজই শিখে নাও ডিপ ব্রীদিং