নিজের মনকে জানতে -- প্রথম পর্ব।
আমি সারাক্ষণই কিছু না কিছু চিন্তা করি। এটা কি কোনো মানসিক ব্যাধি?
আপনি এই নিয়ে একটুও দুশ্চিন্তা করবেন না। মনের প্রকৃতি ই হলো , বিভিন্ন রকমের ভাবনা-চিন্তা ( thoughts) উপস্থাপন করা। শুনলে হয়তো অবাক হবেন, সারাদিনে একজন সাধারণ মানুষের মন প্রায় 75000 থেকে 80000 ভাবনা বা thought উপস্থাপন করে। এর বেশিরভাগই আপনা আপনি চলতে থাকে, সচেতন ভাবে আমরা চিন্তা করি না। এতে তো দোষের কিছু নেই। চিন্তা মনে আসা টা কোনো সমস্যা নয়, এগুলি আসবে- যাবে। ফোকাস করবেন সেইসব চিন্তা গুলিতে যেগুলি আপনাকে পজিটিভ রেজাল্ট দেবে। যেমন কোনো কাজের আগে প্ল্যান করা হতে পারে। আর যেসব চিন্তা নেগেটিভ ইমোশন তৈরী করে যেমন রাগ, ভয়, দুঃখ, হতাশা , হিংসা সেগুলির দিকে সচেতন ভাবে ফোকাস করবেন না অর্থাৎ সেগুলির সাথে নিজে জড়িয়ে যাবেন না। দুরত্ব তৈরী করুন। মনের প্রকৃতি এমনই যে, ভাবনা গুলোর দিকে ফোকাস করলে সেগুলি ডাল পালা মেলে বড়ো হতে থাকে, আর মনোযোগ না দিলে বা ইচ্ছে করে বিপরীত কোনো ভাবনা তৈরি করলে শক্তিহীন হয়ে মন থেকে সরে পড়ে।
মনের ভিতরের অস্থিরতা কমানোর উপায় কী?
খুব ভালো প্রশ্ন। মনের অস্থিরতার শিকার প্রায় সবাই হয়, কিন্তু এর পেছনের প্রকৃত কারণ বা এর প্রতিকার কী হতে পারে সে সম্পর্কে অনেকেরই সুস্পষ্ট কোনো ধারণা থাকে না। আমাদের মন নানা কারণে চঞ্চল হয়ে উঠতে পারে, যদি বাহ্যিক বা পরিবেশগত কোনো কারণে মন অশান্ত হয়, তবে ঠান্ডা মাথায় পরিবেশ পর্যালোচনা করে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিন। অর্থাৎ যে কারণে আপনার মন অশান্ত তা পরিবর্তন করার চেষ্টা করুন। আবার এমনও হতে পারে , বাইরে অর্থাৎ আপনার চারপাশে হয়তো সবকিছু মোটামুটি ঠিকই আছে , তাও আপনি ভেতরে ভেতরে অস্থির হয়ে উঠছেন, আপনি সেইরকম কোনো কারন খুঁজে পাচ্ছেন না তবুও আপনার মন অস্থির/ অশান্ত। নেগেটিভ ভাবনায় আচ্ছন্ন। সেই ক্ষেত্রে , শারীরিক কোনো বিশেষ সমস্যা ( যেমন থাইরয়েডের সমস্যা , রাতে সঠিক ভাবে ঘুম না হওয়া , রক্তে নির্দিষ্ট কিছু হরমোনের গলযোগ, হাইপারটেশন ও আই বি এস এর মতো কিছু সিরিয়াস মেডিকেল ইস্যু ) যদি না থাকে, তবে আপনার জীবনযাত্রায় সামান্য কিছু পরিবর্তন করলে, মনের এই অকারণ চাঞ্চল্য বা অশান্তি অনেক টা ই কমে যাবে। সহজ কিছু টিপস দিচ্ছি, ফলো করে উপকার পাবেন আশা করি।
● সবচেয়ে প্রথমে, যেটা করতে হবে সেটা হলো, প্রত্যাশা কম করতে হবে। মনে রাখবেন, এই পৃথিবীতে কেউ আপনার প্রত্যাশা পুরণ করতে আসেনি। প্রত্যেকের নিজস্ব সত্ত্বা রয়েছে। লোকে সেটাই করবে যেটা তার নিজের কাছে সঠিক মনে হবে। আপনার ইচ্ছা-অনিচ্ছা অন্যের কাছে ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারোর জন্য কিছু করলে সেটা ভালবেসে করবেন, মনে কোনো রকম প্রত্যাশা নিয়ে অন্যের উপকার করতে যাবেন না। নিজেকে পার্ফেক্ট ভাবা বন্ধ করুন। আমাদের সবার ই কিছু না কিছু দোষ ত্রুটি আছে। নিজেকে এক্সেপ্ট করুন, অন্যের ভালবাসার জন্যে আশা না রেখে নিজেই নিজেকে ভালবাসুন। আপনার সবচেয়ে বড়ো বন্ধু আপনি নিজে।
● লাইফে কিছু টা ডিসিপ্লিন ভীষণ জরুরী। রোজ নির্দিষ্ট সময়ে শুতে যাওয়া ও ঘুম থেকে ওঠা অভ্যাস করুন। প্রতিদিন অন্ততপক্ষে 30 মিনিট শরীরচর্চা করবেন এবং sun এক্সপোজার নিতে হবে। এমন কিছু ব্যায়াম বেছে নেবেন যাতে যথেষ্ট শারীরিক পরিশ্রম হয় অর্থাৎ ঘাম ঝরে।
● সহজ পাচ্য ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। অতিরিক্ত প্রাণিজ প্রোটিন, তেল , ঝাল ও মশালাদার খাবার না খেলেই ভালো। পরিবর্তে বিভিন্ন রকমের বাদাম, খেজুর , টাটকা ফলমূল ও শাক সব্জি খাবেন।
● প্রতিদিন কিছুটা সময় খোলা আকাশের নীচে প্রকৃতির মাঝে কাটানোর চেষ্টা করবেন। নিজের সাথে একান্তভাবে সময় কাটানোর এটাই সেরা সুযোগ । সেই সময় টা সাথে মোবাইলও রাখবেন না।
● সকালে ঘুম থেকে উঠার পর প্রথম এক ঘন্টা বা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে শেষের এক ঘন্টা মোবাইল, টিভি , নিউজ পেপার এইসব দেখা বা পড়া বন্ধ করতে হবে, সেই সময়টা ব্যায় করুন নিজের উপরে। নিজের মানসিক স্বাস্থের যত্ন নিন। ভালো কোয়ালিটির বই পড়ুন ( এমন কোনো বই যা আপনাকে পজিটিভ ফীলিংস দেয়, আত্মবিশ্বাস বাড়ায়, জীবনের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতে প্রেরণা দেয়, হতে পারে কারোর আত্মজীবনী, প্রেরণা দয়ক কোনো বই বা ধর্ম গ্রন্থ )।
● এই সুন্দর জীবনের জন্য প্রতিরাতে উপরওয়ালা কে কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুলবেন না। যখন ই সুযোগ পাবেন , নি:স্বার্থ ভাবে অন্যের উপকারে লাগে এমন কোনো কাজ করার চেষ্টা করুন।
সুখীজীবনের জন্য সবচেয়ে সুন্দর উপদেশ কী হতে পারে?
নিজেকে ভালবাসুন - নিজেকে ভালবাসা মানে কিন্তু সব কিছু বাদ দিয়ে স্বার্থপর হতে বলছি না। নিজের শরীর ও মনের যত্ন নিন। যা কিছু আপনার উপকারে লাগে, এমন নতুন নতুন জিনিস শিখতে থাকুন। কু অভ্যাস পরিত্যাগ করুন। কারোর কোনো রকম ক্ষতি না করে জীবন কে উপভোগ করুন। সুযোগ পেলেই প্রাণ খুলে হাসুন। লক্ষ্য অর্জন করতে , পরিশ্রম করুন সৎপথে, শর্ট কাট রাস্তা খুজ্তে যাবেন না। প্রত্যশা ও চাহিদা নিয়ন্ত্রণে রাখুন। প্রতিদিন নি:স্বার্থ ভাবে অন্ততপক্ষে এমন একটি কাজ করুন যা অন্যের উপকারে লাগে। অমূল্য এই জীবনের জন্য সৃস্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞ থাকুন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন