জীবনে সফল হতে শুধু এই একটি জিনিস প্রয়োজন
একটু ভালো করে খেয়াল করলে দেখবে, জীবনে যে কোনো ক্ষেত্রে যারাই আজ সফল হয়েছেন আর যারা তা হতে পারেন নি, তাদের মধ্যে একটাই মৌলিক পার্থক্য রয়েছে, সেটা আর কিছুই নয়, তা শুধু 'আত্মবিশ্বাস' এর ফারাক। বাস্তবে এই আত্মবিশ্বাস ই আমাদেরকে কোনো কাজ এ সফল হতে সাহায্য করে।
এখন প্রশ্ন হলো , আত্মবিশ্বাস আসলে কি? কেনোই বা এক ই পরিবারের দুজন মানুষের আত্মবিশ্বাস ভিন্ন হয়? আত্মবিশ্বাস কি 'অর্জিত' কোনো বৈশিষ্ট , না কি এর পেছনে কোনো জেনেটিক ফ্যাক্টর রয়েছে? ঠিক কি কি কারণে আত্মবিশ্বাস ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন হয়? আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর উপায় ই বা কি? এখানে আমরা আজ এই প্রশ্নগুলির উত্তর খোঁজার চেষ্টা করবো ।
আত্মবিশ্বাস আসলে কী ?
আত্মবিশ্বাস হলো নিজের উপরে বিশ্বাস। আরও সহজ করে বললে, নিজের দক্ষতা ও ক্ষমতা সম্পর্কে আমাদের সচেতনতা ও বিশ্বাস ই হলো আত্মবিশ্বাস যা শত প্রতিকূলতার মধ্যেও লক্ষে স্থির থেকে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগায় ।
অনেক সময় দেখা যায় একই পরিবারের বা একরকম পরিবেশ থেকে উঠে আসা দুজন মানুষের আত্মবিশ্বাস ভিন্ন হয়। কেউ কেউ আবার ছোটবেলা থেকেই আত্মবিশ্বাসে ভরপুর, কেউ বা আবার একটু ভীতু প্রকৃতির , নিজের ব্যপারে সন্দিহান। কেনো এমন হয়? এটা হয় মূলত শরীরে লুকিয়ে থাকা আমাদের কিছু জিনের কারসাজিতে। এটাকেই 'জেনেটিক ফ্যাক্টর' বলে। তবে আত্মবিশ্বাসের ক্ষেত্রে এই জেনেটিক ফ্যাক্টর শতকরা কুড়ি থেকে পঁচিশ ভাগ ক্ষেত্রে দায়ী থাকে , বাকী টা আমাদের হাতে ই রয়েছে অর্থাৎ অর্জিত।
মূলত কোন কোনো কারণে আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি দেখা যায়?
● ভূল দৃষ্টিভঙ্গি ও লক্ষ্যহীনতা।
● নিজেকে ভালবাসতে না পাড়া ।
● জীবনে ঘটে যাওয়া আকস্মিক কোনো দুর্ঘটনা । শারীরিক ও মানসিক শোষণ ।
● একাকিত্ব ও মানসিক অবসাদ।
● পারিপার্শ্বিক নেতিবাচক প্রভাব । উপহাস। উপেক্ষা।
● জেনেটিক ফ্যাক্টরস ।
কিভাবে আত্মবিশ্বাস বাড়ানো সম্ভব?
আমরা অনেকেই মনে করি, আগে আত্মবিশ্বাস বাড়াতে হবে, তারপরই কোনো কাজে সাফল্য আসবে। এটা আসলে ভুল ধারণা। আত্মবিশ্বাস কিন্তু ক্ষেত্র বিশেষে ভিন্ন হয়। যেমন ধরো তুমি ক্রিকেট খেলতে ভালবাস, কেউ যদি তোমাকে খেলার জন্য মাঠে ডাকে তুমি কিন্তু আত্মবিশ্বাসী হয়ে খেলবে । কিন্তু এখন যদি তোমাকে কেউ স্টেজ এ সবার সামনে গান গাইতে ডাকে, তাহলে সেই তুমি ই কিন্তু এবার ভয় পাবে। আত্মবিশ্বাসহীনতায় ভুগবে। কেননা তুমি কখনো স্টেজ এ গান করোনি। তার মানে হচ্ছে, জীবনের সব ক্ষেত্রে মানুষ সমান ভাবে আত্মবিশ্বাসী থাকে না। যে কাজ আমি কখনো করিইনি তাতে আত্মবিশ্বাস বাড়বে কি করে!! আসো জেনে নেই আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর কার্যকরী উপায়গুলো কী
🔷️ নিজেকে সম্পূর্ণ ভাবে এক্সেপ্ট করো :
দোষ-গুণ নিয়েই তো মানুষ। কেউ পারফেক্ট নয়। তোমার যদি কিছু দুর্বলতা থেকেও থাকে, সেগুলিকে স্বীকার করো। এগুলিকে বড়ো করে না দেখে , নিজের ভালো দিক গুলিকে দেখো। নিজের যোগ্যতায় যা কিছু অর্জন করেছো সেগুলি দেখার চেষ্টা করো। যা পাওনি / পারোনি সেদিকে ফোকাস করবে না। দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে । এটা একটা অভ্যাস। ধীরে ধীরে তৈরী হবে। একদিনে হবে না।
🔷️ লক্ষ্য স্থির করো :
নিজের সাথে সময় কাটাও। নিজের সাথে কথা বলো। অহেতুক অন্যের সাথে নিজের তুলনা করবে না। তুমি কী হতে চাও? / কী করতে চাও? / কোথায় পৌঁছাতে চাও? এটা সম্পূর্ণ তোমার ইচ্ছা। লক্ষ্য তোমাকেই ঠিক করতে হবে। লক্ষ্যহীন মানুষ প্রায় ই হীনমন্যতায় ভোগে।
🔷️ প্র্যাকটিস করো আত্মবিশ্বাস বাড়বে :
যখন কোনো একটি লক্ষ্য স্থির করে , তা অর্জন করতে আমরা ছোটো ছোটো স্টেপ নেই , কখনো সফল হই , আবার কখনো বা ব্যর্থ । হার-জিত টা ইম্পরট্যান্ট নয়। এই প্রচেষ্টা গুলি ই আদতে আমাদেরকে অভিজ্ঞতা দেয় , আমরা শিখতে থাকি। আর বাড়তে থাকে আত্মবিশ্বাস।
🔷️ চ্যালেঞ্জ জানাও নিজেকে :
আমাদের মানসিক গঠনটা ই এরকম যে আমরা অজানা কিছু কে ফেস করতে ভয় পাই। পরিচিত পরিবেশেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। এটাকেই "কমফোর্ট জোন" বলে। কমফোর্ট জোনে থাকার অভ্যাস আমাদেরকে ক্রমশঃ দুর্বল করে। সুতরাং নিজেকে চ্যালেঞ্জ জানাও। একটু একটু করে নিজেকে অপরিচিত পরিবেশের সাথে এক্সপোজ করো। এটাই নেট প্র্যাকটিস যা ধীরে ধীরে তোমাকে ফাইনাল ম্যাচের জন্য তৈরী করবে।আত্মবিশ্বাস বাড়বেই।
🔷️ প্রাণ খুলে হাসো :
হাসি একটা দারুণ কগ্নিটিভ স্কিল। একমাত্র মানুষ ই এমন করে প্রাণ খুলে হাসতে পারে। ভালো হাসি মস্তিস্কে ডোপামিন ও সেরোটোনিন হরমোনের মাত্রা বাড়ায় , যা আমাদের মূড কে ভালো রাখে ও পসিটিভ থাকতে সাহায্য করে। সুতরাং প্রাণ খুলে হাসো। নিজের ভুলের জন্য নিজের উপরেও হাসতে পারো । হাসি হয়তো জীবনের সব সমস্যার সমাধান করে না , কিন্তু যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস ও পসিটিভিটি এনে দেয় , যা তে করে আমরা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে ভয় না পাই ।
🔷️ কৃতজ্ঞতা ও নি:স্বার্থ সেবা :
জীবনে আমরা যা কিছু পেয়েছি তার জন্য সর্বশক্তিমানের কাছে , এই জীবনের কাছে আমাদের সবার কৃতজ্ঞ থাকা উচিৎ। এই বিশ্বে কতো কতো মানুষ কতো কষ্টে আছে ! যন্ত্রণা ভোগ করছে । সেই তুলনায় আমরা অনেক গুন ভালো একটা জীবন উপভোগ করছি। জীবন থেকে দু হাত ভরে নিয়েই গেলাম , কিছুই তো দেয়া হলো না! আমাদের প্রত্যেকের উচিত অন্যের জন্য নি:স্বার্থ ভাবে কিছু করা। এই নি:স্বার্থ সেবাভাব মনে প্রশান্তি এনে দেয়। কারোর জন্য ' কিছু করতে পারা ' র অনুভুতি আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।
🔷️ যাঁরা তোমাকে বোঝে , তোমার কাজে উত্সাহিত করে , সাপোর্ট করে এমন সব মানুষের সাথে থাকো , আত্মবিশ্বাস বাড়বেই। নেগেটিভ মানুষদের থেকে দূরে থাকো।
মনে রাখবে হেরে যাওয়াটা দোষের নয় , কিন্তু হার মেনে নিয়ে বসে পড়া দোষের। এডিসন বাল্ব বানাতে গিয়ে এক হাজার বারের ও বেশী সময় ব্যর্থ হয়েছিলেন। এক সহকর্মী বলেছিলেন " ছেড়ে দাও , এ আর তোমার দ্বারা হবে না। " তখন উনি হেঁসে বলেছিলেন , " আমি এখন এক হাজারের ও বেশী রাস্তা জানি যে পথে বাল্ব বানানো যায় না !" এই রকমের সদর্থক দৃষ্টিভঙ্গি ই মানুষকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে এবং যথারীতি একদিন সফলতা ও আসে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন